অবশেষে বরিশালের আলোচিত স্বর্ণপ্রতারক মফিজ সরদার ওরফে সোনা মফিজ এবং তার সহযোগী সোনা কাওসারকে গ্রেপ্তার করেছে কাউনিয়া থানা পুলিশ। ভুক্তভোগীদের পক্ষে একটি মামলার প্রেক্ষিতে এই কুখ্যাত প্রতারককে মঙ্গলবার সকালে কাউনিয়া থানা থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে টেক্সটাইল রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ৩০ নভেম্বর শহরের কাউনিয়া জানুকিসিং রোডে প্রতারণার প্রাক্কালে কালু মৃধা (৩২) নামের তার এক সহযোগীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও মফিজ ও কাওসার পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। স্বৈরাচারী শাসনামলে এই মফিজ কাউনিয়া থানা পুলিশ ম্যানেজ করে প্রতারণা চালিয়েছেন। ওই সময়ে তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি, যা নিয়ে সর্বমহলে ক্ষোভ ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেই কাউনিয়া থানা পুলিশই এই প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কুখ্যাত প্রতারক মফিজ এবং কাওসারকে গ্রেপ্তারে স্থানীয় ছাত্র-জনতা পুলিশের পাশাপাশি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। মূলত তারাই মফিজের জোড়মসজিদ সংলগ্ন বাসা চিহ্নিত করে সেখানে অবস্থান নিয়ে কাউনিয়া থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এর আগে উত্তেজিত জনতার রোষ থেকে রক্ষা পেতে তিনি বাসায় লুকিয়ে ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, সহযোগী কালু মৃধাসহ কয়েকজনকে নিয়ে মফিজ গত কয়েক বছর বরিশাল শহরে অন্তত শতাধিক মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। কথিত স্বর্ণের বার স্বল্পমূল্যে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে তিনি অনেক মানুষকে নিঃস্ব করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে তৎসময়ে একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
পুলিশের ভেতরকার একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, তৎকালীন কাউনিয়া থানা পুলিশের এসআই জাহিদের সঙ্গে স্বর্ণপ্রতারক মফিজের গভীর সখ্যতা ছিল। এই কর্মকর্তা তাদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন। যে কারণে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও মফিজের বিরুদ্ধে তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, উল্টো এই মফিজের হয়ে কাউনিয়া থানা পুলিশ বছরখানেক আগে উত্তর আমানতগঞ্জ এলাকার অনন নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছিল। পরবর্তীতে তাকে থানা হেফাজতে রেখে এসআই জাহিদ এবং স্বর্ণপ্রতারক মফিজ মোটা অঙ্কের অর্থ হাতানোর কৌশল নেয়। যুবকের পরিবার শেষ পর্যন্ত থানা পুলিশকে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পান।
কিন্তু ধুরন্ধর মফিজের শেষ রক্ষা হলো না! কিছুটা বিলম্বে হলেও তাকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এবং সেই কাউনিয়া থানা পুলিশই এবার তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ড জানুকিসিং রোডে প্রতারণার প্রাক্কালে মফিজের সহযোগী কালু মৃধাকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে স্থানীয় জনতা। এই ঘটনায় রিপন হাওলাদার নামের একজন ব্যক্তি আটক কালু এবং মফিজসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে কাউনিয়া থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় মফিজকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে কাউনিয়া থানা পুলিশ।
মামলার বাদী রিপন হাওলাদার অভিযোগ করেন, ভাটিখানা গাউয়াসর এলাকার বাসিন্দা মফিজ সরদারসহ পাঁচজনের একটি গ্রুপ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘোরাঘুরি করে এবং সরল-সহজ মানুষকে স্বর্ণবারের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে কোনো আইনি জটিলতা ছাড়াই প্রতারণা চালিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন মফিজসহ সহযোগীরা। এই টাকার একটি অংশ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউনিয়া থানার তৎকালীন কর্মকর্তাদের উপঢৌকন হিসেবে দেওয়া হতো।
এমন বাস্তবতায় কথা উঠেছে, ৫ আগস্টের পর কাউনিয়া থানা পুলিশে পরিবর্তন এসেছে। থানাটিতে চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা নুরে আলম ওসি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থানার কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন এসেছে। পুলিশ সাধারণ মানুষের সঙ্গে এখন ভালো আচরণ করছে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
ওসি নুরে আলম বলেন, "অতীতে থানায় যা হয়েছে, সেগুলো মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। অপরাধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এসআই দেলোয়ার স্বর্ণপ্রতারক মফিজ এবং কাওসারকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন।"
তিনি আরও জানান, মফিজের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারেন। তাকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রয়োজন হলে আদালতের নির্দেশ নিয়ে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য