গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদনে ফিরতে পারছে না আশুগঞ্জ সার কারখানা। বিতরণ সংস্থা বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও মিলছে না সমাধান। এদিকে গ্যাসের চাপ কম থাকায় ইউরিয়া উৎপাদন না করেও বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে কারখানা কর্তৃপক্ষকে।
জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কারখানার উৎপাদন বিভাগে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় বিজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ। কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক-কর্মচারীগণ বিভিন্ন সময় উৎপাদন বিভাগে গ্যাস সরবরাহের দাবি জানালেও গ্যাস সরবরাহ করা হয়নি। অবশেষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের গত নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখে পুণরায় গ্যাস সরবরাহ দেয় বিজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ। গ্যাস সরবরাহ পাওয়ার পর পরই কারখানা চালুর উদ্যোগ শুরু করে এএফসিএল কর্তৃপক্ষ। তবে নির্ধারিত চাপে গ্যাস না পাওয়ায় ইউরিয়া শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। কারখানা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের দাবি, এতে একদিকে ইউরিয়া উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে অহেতুক দৈনিক প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার গ্যাস বিল কারখানা কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। তারা জানায়, কারখানার অবস্থান গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) নিকটে। সুতরাং বিতরণকারী কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে নির্ধারিত চাপে গ্যাস দেওয়া সম্ভব। তবে বিজিডিএল কর্তৃপক্ষের দাবি, গ্যাসের গ্রিড লাইনে গ্যাসের চাপ কম। ফলে নির্ধারিত চাপে গ্যাস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
কারখানা সূত্র জানায়, কারখানায় সার উৎপাদন এবং বিভিন্ন প্ল্যান্ট পূর্ণ শক্তিতে চালু রাখতে ৪০ থেকে ৪২ বার চাপে (৫৮৮ থেকে ৬২০ পিএসআই) দৈনিক ৪৮ থেকে ৫২ এমএমসিএফ গ্যাসের প্রয়োজন। কিন্ত গ্যাস সংযোগ দেওয়ার পর গ্যাসের চাপ ঠিক থাকলেও পরে তা কমে যায়। মাঝে মাঝে গ্যাসের চাপ ৩৫ বারের নিচেও নেমে আসে। ফলে চালু কারখানা উৎপাদনের মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে ইউরিয়া উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে বিজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশে গ্যাসের উৎপাদন ও এলএনজি আমদানি কম থাকায় গ্যাসের গ্রিড পাইপ লাইনে চাপ কম।
এব্যাপারে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রদীপ কুমার নাথ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি কারখানার সিবিএর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
এব্যাপারে কারখানার সিবিএর সাধারণ সম্পাদক মো. আবু কাউছার বলেন, গ্যাসের চাপ সর্বনিম্ন পর্যায়ে। ফলে কারখানার ইউরিয়া উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি বিতরণকারী কর্তৃপক্ষকে সার কারখানা কর্তৃপক্ষ অবহিত করার পরেও সমাধান মিলছে না। তিনি আরো বলেন, দৈনিক প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার গ্যাস পুড়ানো হলেও ইউরিয়া উৎপাদন সম্ভব না হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ। আশুগঞ্জ সার কারখানাটি একেবাওে জিটিসিএলের নিকটে। সুতরাং বিতরণকারী কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলেই কারখানায় গ্যাসের চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
এব্যাপারে বিজিডিসিএল এর ডিজিএম (সঞ্চালন) প্রকৌশলী মো. জাহিদুর রেজা বলেন, গ্যাসের জাতীয় গ্রিডে বা পাইপ লাইনে গ্যাসের সরবরাহ কম ফলে নির্ধারি চাপে কারখানায় গ্যাস প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য