ফেনী মুক্ত দিবস ছিল আজ ০৬ ডিসেম্বর, শুক্রবার।
ফেনী জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ফেনী মুক্ত দিবস পালন করেন।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে শহরের পুরাতন জেল রোডস্থ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।
একই দিন সকাল ১১ টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ফেনীকে হানাদার মুক্ত করতে যাদের অবদান অপরিসীম তাদের প্রতি রইল অশেষ শ্রদ্ধা ও সম্মান।
তিনি বলেন, এই সমাজে কোনো বৈষম্য থাকতে পারবে না, এই সমাজটা হবে ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক।
গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো যেন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
সবাই যেন স্বাধীনভাবে দেশের জন্য কাজ করতে পারে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মো: হাবিবুর রহমান।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মো: বাতেন।
সভায় উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বক্তব্যে ফেনীকে হানাদার মুক্ত করার ইতিহাস তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, বিজয় দিবসের ১০ দিন আগেই হানাদার মুক্ত হয় ফেনী। মুক্তিযুদ্ধের ২নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নেতৃত্বে ৬ ডিসেম্বর ভোরেই মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে ফেনী প্রবেশ করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে পুরো শহর প্রকম্পিত করে তোলে।
বক্তারা আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা পাশ্ববর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে অবস্থান নিয়ে শত্রুর মোকাবিলায় আস্তে আস্তে অগ্রসর হতে থাকেন। পরশুরামের বিলোনীয়ায় পাকসেনাদের সাথে কয়েক দফা সম্মুখ লড়াই হয় মুক্তিযোদ্ধাদের। সর্বশেষ ৪ নভেম্বর রাতে মুহুরী নদীর পাড় ঘেঁষে পরশুরামে প্রবেশ করেন ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইপিআর সদস্য ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা পাকসেনাদের দখলে থাকা চিথলিয়া ও পরশুরামের মজুমদার হাট ক্যাম্পের মাঝ বরাবর ঢুকে পড়ে শত্রুর অবস্থানে অতর্কিতে হামলা করে তাদের নাস্তানাবুদ করে তোলেন। দুপক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই শেষে ৭ নভেম্বর পরশুরামকে শত্রু মুক্ত করা হয়। শত্রু-অবস্থানের মাঝ বরাবর ঢুকে পড়ে যুদ্ধ করার এমন ঘটনা শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়, বিশ্বের যুদ্ধের ইতিহাসেও বিরল। যে কারণে বিভিন্ন দেশের সামরিক শিক্ষার বইয়ে বিলোনিয়ার যুদ্ধ বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
ফেনী জেলা কালচারাল অফিসার এস এম টি কামরান হাসানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জেলা সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা: হাসান ইমাম, গণপূর্ত বিভাগের প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান জিতু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেহেরাজুল করিম মানিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিব উল্লাহ বাহার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সালেহ আহমেদ ছালু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক আবু তাহের, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ফেনী জেলা ইউনিটের সভাপতি জুলফিকার আলী ভুট্রো, ছাত্র প্রতিনিধি সালমান হোসেন, প্রিন্স মাহমুদ আজিম প্রমুখ।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য