ঢাকার অদূরে শিল্পঞ্চল সাভারের আশুলিয়ায় বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ১৫ শতাংশ করার দাবী জানিয়ে কর্মবিরতি পালন করছে বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্তত ১২ টি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ও ২টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে ৯টা থেকে পর্যায়ক্রমে এসব কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
হামীম গ্রুপ, শারমীন গ্রুপ, মেডলার, নেক্সট কালেকশন, আল মুসলিম, সেতারা গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে নাসা ও ট্রাউজার লাইন পোশাক কারখানা শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বান্ডো ডিজাইন কারখানাও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া হামীম ও নিট এশিয়ার শ্রমিকেরা এরইমধ্যে কারখানা থেকে বেরিয়ে গেছে। নিউ এজ, ডেকো, আল মুসলিম, এথিকালসহ আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা কারখানার ভেতরে কর্মবিরতি পালন করছেন।
শিল্প পুলিশ জানায়, শ্রমিকেরা বিশৃঙ্খলা বা ঝামেলা করছেন না। তবে বর্ধিত বেতনে শ্রমিকরা সন্তুষ্ট না। তাদের ১৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের দাবি। তাই শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রেখেছেন। অনেক শ্রমিক আবার কারখানা থেকে বের হয়ে গেছেন।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরে বাৎসরিক বেতন ও ভাতা (ইনক্রিমেন্ট) ১৫ শতাংশ বাড়ানোর পাশাপাশি বাৎসরিক অর্জিত ছুটির বকেয়া টাকা প্রতিমাসে পরিশোধের দাবি জানিয়ে আাসছিলেন। এসব দাবির পাশাপাশি শ্রমিকেরা নিন্মতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করারও দাবি জানান।
বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অরবিন্দ বেপারী বিন্দু বলেন, সম্প্রতি ৪ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করেছে সরকার। বছরের শুরুতেই এই ইনক্রিমেন্ট পাবে বলে জানা গেছে। সেজন্য শ্রমিকদের উচিত হবে কলের চাকা সচল রাখা এবং তৃতীয় পক্ষ কারো ফাঁদে পা না দেয়া।দেশের পারিপার্শ্বিক অবস্থা চিন্তা করে উৎপাদন অব্যাহত রেখে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা। যদি কোন শ্রমিক উস্কানির ফাঁদে পা দেন তাহলে সেই দায়িত্ব তার নিজেরই নিতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের শিল্প বাচাতে, দেশের শ্রমিক বাঁচাতে এবং দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য তৃতীয় পক্ষ কারো প্ররোচনায় না পরে শ্রমিকরা স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখবেন বলে শ্রমিকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, শ্রমিকেরা কারখানায় প্রবেশ করে কর্মবিরতি পালন করায় অন্তত ১২টি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকেরা মূলত বর্ধিত বেতনে সন্তুষ্ট নন, তাই তারা কাজ বন্ধ করে বসে আছেন। তবে কোনো অরাজকতা কিংবা বিশৃঙ্খলা তারা করছেন না বলেও জানান তিনি।
এ ছাড়া কাজ বন্ধ করে শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করায় গতকালের ঘোষণা অনুযায়ী বন্ধ রয়েছে আরও কিছু কারখানা। যদিও এখন পর্যন্ত বন্ধ থাকা এ কারখানাগুলোর সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। তবে গতকাল মঙ্গলবার শ্রমিকদের কর্মবিরতির মুখে আশুলিয়ার অন্তত ১০টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য