শিক্ষককে ঘোড়ার গাড়িতে করে রাজকীয় বিদায় দিলেন সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
শিক্ষককে ঘোড়ার গাড়িতে করে রাজকীয় বিদায় দিলেন সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার দুবলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৮৮ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মাহাবুবুল আলম সরকার। দীর্ঘ চাকুরী জীবনে নানা স্মৃতি বুকে নিয়ে সেই স্কুল থেকেই বিদায় নেওয়ার সময়। বিদায় সব সময় বেদনার হলেও কখনো কখনো তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। এমনই এক বিদায়ী সংবর্ধনা পেয়েছেন শিক্ষক মাহাবুবুল আলম সরকার। এই শিক্ষকের অবসরগ্রহণ উপলক্ষে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বর্ণিল এই আয়োজন করেছে। বিভিন্ন ফুলের মালা দিয়ে সাজানো ঘোড়ার গাড়িতে করে ওই শিক্ষককে বিদায় জানান সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আব্দুল হান্নানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পলাশবাড়ী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আরজুমান আরা গুলেনুর।

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পলাশবাড়ী রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর রবিউল ইসলাম, সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শাহজাহান সরকার,পলাশবাড়ী উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহমুদুল হাসান,ফেরদৌসি বেগম,ফিরোজ কবীর, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহেদার রহমানসহ শিক্ষকবৃন্দ।

শিক্ষক মাহাবুবুল আলম সরকার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি বিদায় নিচ্ছি, কিন্তু আমার দোয়া রেখে গেলাম। তোমরা লেখাপড়া করে যখন অনেক বড় হবে, তখন আমাদের কথা মনে পড়বে। তোমরা নিজেদেরকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আমাকে যেভাবে সম্মানের বিদায় দিয়েছো তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মাঝেমধ্যেই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসব, তোমাদের লেখাপড়ার খোঁজ নিতে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, মাহাবুবুল আলম স্যার শুধু শিক্ষক ছিলেন না, তিনি বাবার মতো আমাদের স্নেহ করতেন। তার বিদায় আমাদেরকে খুব মর্মাহত করছে। তিনি না থাকলেও তার দেওয়া শিক্ষা আমাদের মানবিক জীবন গড়তে সহায়ক হবে।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী সেলিম বলেন, বিদায়ী শিক্ষক মাহাবুবুল আলম শুধু একজন শিক্ষকই নন, তিনি আমার বাবার মতো ছিলেন। যেকোনো বিষয়ে পরামর্শ নিতাম। বিদায় বড় কষ্টের, তবুও মানতে হবে।

আমাকেও এভাবে একদিন বিদায় নিতে হবে। একজন শিক্ষকের বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে তাকে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্মরণে রাখতেই এমন ব্যতিক্রমী ও বর্ণাঢ্য আয়োজন।

পলাশবাড়ী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আরজুমান আরা গুলেনুর বলেন, একজন শিক্ষক যখন তার চাকরিজীবন শেষে বাড়ি ফিরে যান তখন তিনি অনেক কষ্ট পান। সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের রেখে চলে যাওয়া খুব কষ্টের। বিদায়ের কষ্ট কিছুটা কমানোর জন্যই কর্তৃপক্ষ ব্যতিক্রমী এমন আয়োজন করেছে। শুধু মাহাবুবুল আলম নয়, প্রতিটি শিক্ষকের বিদায় এমন হওয়া উচিত।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দুবলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী সেলিম।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য