আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ধোপাজান নদীর বালু-পাথর লুটের ঘটনা এবার সড়কপথেও বিস্তৃত হয়েছে। এতদিন নৌপথে এসব লুটপাট চললেও এখন সড়কপথে এই কার্যক্রম চালিয়ে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের তৎপরতা ঘিরে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের ডলুরা পূর্বপাড়ে দেলোয়ার ও সাদেক নামে একটি চক্র শতাধিক ট্রাক, ট্রাক্টর, ও পিকআপের মাধ্যমে নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন করে সুরমা ইউনিয়নের হালুয়ার ঘাট বাজারের ক্রাশার মিলে বিক্রি করছে। এর ফলে মঙ্গলকাটা বাজার, চৌমুহনী বাজারসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট লেগেই থাকে।
জনদুর্ভোগ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা
মঙ্গলকাটা বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হাদী জানান, দিনে ও রাতে এই চক্রের কর্মকাণ্ডে মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। অবিলম্বে এসব বন্ধে প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
গত ৬ অক্টোবর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া ধোপাজান নদী থেকে অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন ও পরিবহণ বন্ধে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার চলতি নদীর মোহনা থেকে উত্তর সীমান্ত খাসিয়া পাহাড় পর্যন্ত নদী এলাকায় বাল্কহেডসহ সব জলযান প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। তদুপরি, অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসনের নির্দেশে গত ১৮ অক্টোবর চলতি নদীর প্রবেশমুখে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকেই নৌকা পুনরায় প্রবেশ করতে শুরু করে। পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান ঘটনাস্থলে গিয়ে নৌকা দিয়ে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে লুটপাট বন্ধের চেষ্টা করেও সফল হননি।
ইজারাবিহীন নদীতে লুটপাট
জানা যায়, ২০১৮ সালের পর থেকে ধোপাজান নদী ইজারাবিহীন রয়েছে। এ সুযোগে একটি চক্র নানাভাবে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন করে আসছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে চক্রটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, গভীর রাতে ড্রেজার ও সেইভ মেশিন দিয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী উপায়ে বালু-পাথর উত্তোলনের কারণে তাদের বৈধ আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বারকী শ্রমিক সংঘের সভাপতি নাছির উদ্দিন এবং শ্রমিক নেতা সাইফুল আলম ছদরুল জানান, সনাতন পদ্ধতিতে বালু-পাথর উত্তোলন করলে পরিবেশের ক্ষতি হয় না এবং সাধারণ শ্রমিকরা আয়-রোজগার করতে পারে।
প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানিয়েছেন, বিজিবি অধিনায়ক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমাও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খান বলেন, “আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।” সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবি'র অধিনায়ক লে. কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির জানান, “বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জনসাধারণ আশা করছেন, প্রশাসনের দ্রুত কার্যকর উদ্যোগে অবৈধ বালু-পাথর লুট বন্ধ হবে এবং নদী ও পরিবেশ রক্ষা পাবে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য