চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচালিত চকবাজার কাঁচাবাজার ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হলেও, এখনও পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হয়নি। উদ্বোধনের পর নিচতলা চালু হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা অব্যবহৃত রয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বরাদ্দপ্রাপ্ত দোকান মালিকরা।
বাজারটি খালি পড়ে থাকার সুযোগে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে বছরের পর বছর ধরে চলছে অবৈধ বাণিজ্য। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ধুনীরপুল থেকে ফুলতলা পর্যন্ত কোটি টাকার ব্যয়ে নির্মিত ফুটপাতটি দীর্ঘ আট বছর ধরে ভাসমান হকারদের দখলে রয়েছে। এই ফুটপাত একদিনের জন্যও পথচারীদের হাঁটার উপযোগী হয়ে ওঠেনি। দফায় দফায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি। বরং ফুটপাত দখল করে চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব, যা এলাকায় প্রতিদিন যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চকবাজার কাঁচাবাজার থেকে ফুলতলা, লালচান্দ রোড, গুলজার, কলেজ রোড, প্যারেড কর্নার ও তেলপট্টি রোড এলাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক ভাসমান হকার বসেন। এদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৩০০-৩৫০ টাকা চাঁদা আদায় করা হতো। তবে গত ৫ আগস্ট প্রশাসনিক পরিবর্তনের পর থেকে এই চাঁদাবাজি বন্ধ হয়। যদিও বাজারের নামে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে হাসিল আদায় করা হচ্ছে।
কয়েক মাস চাঁদাবাজি বন্ধ থাকার পর গুলজার মোড় ও কলেজ রোড এলাকায় আবার নতুন করে চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। চকবাজার থানা হকার্স সমিতির নামে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে ভাসমান হকারদের কাছ থেকে এবং তাদের চাঁদা আদায়ের জন্য সমিতির বই দেওয়া হয়েছে।
কাঁচাবাজারে দোকান বরাদ্দপ্রাপ্ত একাধিক মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিচতলা থেকেই যদি মানুষ বাজার করতে পারে, তবে কেউ দোতলায় উঠতে চাইবে না। এমন অবস্থায় দোকান চালু করলেও ব্যবসা চলবে না। তবে নতুনভাবে উদ্যোগ নেওয়া হলে পরিস্থিতি হয়তো পাল্টাতে পারে।
চকবাজার কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, "আমি দায়িত্বে থাকাকালীন দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা চালুর অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু রাস্তা-ফুটপাতের দখল বাণিজ্যের কারণে তা সম্ভব হয়নি। যারা দোকান কিনেছেন, তারা সবাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।"
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর চকবাজার এলাকায় দুইবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। গত ২১ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় এবং ৮ ডিসেম্বর এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী নেতৃত্ব দেন। অভিযানের পরও রাস্তা ও ফুটপাত পুনরায় দখল হয়ে যায়।
অভিযান শেষে মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী ভাসমান ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, "মেয়র মহোদয় আপনাদের চকবাজার কাঁচাবাজারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা আগামী পাঁচ মাস কোনো ভাড়া ছাড়াই ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছেন। এরপরও বাজার খালি পড়ে আছে এবং রাস্তা-ফুটপাত দখল করে বাণিজ্য চলছেই।"
কাঁচাবাজারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা এখনো খালি পড়ে আছে। দোতলায় একটি শৌচাগার চালু করে সেখান থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। তৃতীয় তলার এক পাশে কাউন্সিলর কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় আশপাশের দোকানের কর্মীরা বিশ্রাম নেন এবং ভবঘুরেরা রাত যাপন করেন। মূল ভবনের সামনের রাস্তা ও ফুটপাতে সবজি, মাছসহ নানা ধরনের ভাসমান দোকান বসানো হয়েছে। ধুনীরপুল থেকে ফুলতলা পর্যন্ত রাস্তা-ফুটপাত দখলে রেখেছে শতাধিক ভ্যানগাড়ি।
স্থানীয়রা মনে করেন, বাজারটি চালু করতে হলে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাঁচাবাজারের ভবনে স্থানান্তর করতে হবে। যারা ভবনে উঠতে রাজি হবে না, তাদের জরিমানা ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে রাস্তা ও ফুটপাতে অবৈধ দোকান বসানোর বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সিটি মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী বলেন, "মাননীয় মেয়র মহোদয় ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি সিটি গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। এর অংশ হিসেবে প্রতিদিন রাতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। চকবাজারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ভাসমান ব্যবসায়ীদের বসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং আগামী পাঁচ মাস তাদের কাছ থেকে কোনো ভাড়া নেওয়া হবে না। যারা এরপরও রাস্তা-ফুটপাতে বসবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য