শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য এত মানুষ জীবন দেয়নি

- উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য এত মানুষ জীবন দেয়নি

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, এক দফা বাস্তবায়ন হিসেবে আমরা মনে করি, সংস্কার কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র একটি নির্বাচন কিংবা ভোটের জন্য এত এত মানুষ জীবন দেয়নি। আমরা ধারণা করছি, প্রায় ২ সহস্রাধিক মানুষ শহীদ এবং ২০ হাজারের বেশি আহত। শহীদ ও আহতরাও সংস্কারের কথা বলছে।

আজ বুধবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদ হলরুমে অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, আপনারা জানেন, এই গণঅভ্যুত্থানের যে এক দফা ছিল, সেই এক দফা ছিল স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন এবং ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থার বিলুপ্তি। ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থা বিলুপ্ত বলতে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝি, প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফ্যাসিজমের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাংলাদেশে। সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস অবস্থায় রেখে যাওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্লিয়ার ম্যান্ডেট হচ্ছে- আমরা সংস্কার কার্যক্রমগুলো করব। আপনারা জানেন, আমাদের কমিশনগুলোর প্রায় তিনমাসের মতো সময় হয়ে যাচ্ছে, কমিশনগুলো প্রস্তাবনা দেবেন। তারপর যারা স্টেকহোল্ডার আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে একটি নির্বাচনের দিকে যাব।

আসিফ মাহমুদ বলেন, একটি কথা বলতে চাই, বিগত সময়গুলোতে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো উন্নয়নের দিক থেকে যথেষ্ট অবহেলিত ছিল। আমরা যখন বিভিন্ন প্রকল্প দেখি, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়ন কার্যক্রম কিছু জায়গায় সীমাবদ্ধ ছিল। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ অবহেলিত এবং বঞ্চিত ছিল। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় যে অঞ্চলগুলোকে বৈষ্যমের স্বীকার করা হয়েছে, সেখানে বিশেষ গুরুত্বসহকারে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

তিনি যোগ করেন, আমরা দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে নিয়ে যাব, যাতে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় শেষ হয়ে গেলেও আপনারা সেগুলোর সুফল পাবেন। সর্বশেষ, সরকারের যে সংস্কার এজেন্ডা, অভ্যুত্থানে বা অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন, তাদের যে চাওয়া-পাওয়া সংস্কার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগে আপনাদের মতামত, সহযোগিতা এবং সমর্থন প্রত্যাশা করছি।

উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে চায়, সেভাবেই করতে চাই। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান যেন জনবান্ধব হয়ে কাজ করতে পারে, সেজন্য সেভাবেই গড়ে দিতে চাই। সেজন্য আপনার সমর্থন ও মতামত চাই।

আন্দোলনে ঠাকুরগাঁও জেলার আহতরা সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছে না এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, এখানে আহত কয়েকজনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে এবং এখানে যারা কাজ করছে, তাদেরও সঙ্গে কথা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে আরও কিভাবে সহযোগিতা করা যায়, যেমন যারা কেন্দ্রীয়ভাবে বিষয়টি দেখেন, জুলাই স্মৃতি শহীদ ফাউন্ডেশন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করে দেব। আশা করি সামনের দিনে আর এই সমস্যাগুলো থাকবে না।

অনুষ্ঠান শেষে উপজেলার কিশমত পলাশবাড়ী (চৌরঙ্গী) থেকে কালির হাট রাস্তার ৮৫০মি: চেইনেজে তীরনই নদীর উপর ১২০মি: আরসিসি ব্রীজ নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় আরও বক্তব্য দেন ঠাকুরগাঁও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সরদার মোস্তফা শাহিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিজা বেগম, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার দেবনাথ প্রমূখ।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য