ব্লগস্পটে শেয়ার করুন
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় র্যাবের পোশাক পরে ডাচ্ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকে কর্মরত দুইজনকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে সাড়ে ২৮ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় ১১ জন আন্তঃজেলা ডাকাতকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটিও উদ্ধার করা হয়েছে। তারা র্যাবের পোশাক পরে খেলনা পিস্তল নিয়ে লুট করেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিষয়টি মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. জিয়াউর রহমান।
এর আগে রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাত সোয়া ১০টার দিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জেলা পুলিশ জানায়, র্যাবের পোশাক পরে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ২৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা লুটের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১১ জন আন্তঃজেলা ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি X-NOHA মাইক্রোবাস, একটি মোটরসাইকেল, চাবি ও কাভারসহ একজোড়া হ্যান্ডকাফ, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত র্যাবের দুটি কটি, কাভারসহ একটি খেলনা পিস্তল, চার্জারসহ একটি ওয়াকিটকি, ১৭টি মোবাইল এবং লুট হওয়া টাকার মধ্যে কিছু টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাতিয়া গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে জীবন পারভেজ রেজা (৪৭), একই গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে বাচ্চু মিয়া (৪৭), একই গ্রামের মৃত তুফান মণ্ডলের ছেলে রবিউল করিম (৪৫), মৌলভীবাজারের রাজনগর থানার করতল গ্রামের মৃত ময়না মিয়ার ছেলে আবজাল মিয়া উজ্জ্বল (৪০), ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার জুরকাঠি গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে মো. জয় (৪০), চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানার সাতবাড়িয়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সুমন মিয়া (৪০), শেরপুরের শ্রীবরদী থানার ধাতুয়া গ্রামের মৃত সৈয়দুল রহমানের ছেলে মো. সুমন (৪৭), পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার বড়মাছুয়া গ্রামের হোসেন আলীর পুত্র শাহাদাত হোসেন (৫৫), জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার মানিকপাড়ার মৃত আনোয়ারুলের ছেলে মো. আপেল (৩৬), পাবনার চাটমোহর থানার নবীন পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেন সরদারের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪৪) এবং চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার ভুটাল হাজি বাড়ি গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে মোস্তফা কামাল জয় (৪৭)।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ১২ ডিসেম্বর বিকেলে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে কর্মরত মো. মামুনুর রশিদ এবং মো. জোনায়েদ রহমান মিরাজ মোট ২৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে মেসার্স মীর ট্রাভেলস নামক ডাচ্ বাংলার মাস্টার এজেন্ট ব্যাংক থেকে মোহনপুর ডাচ্ বাংলা এজেন্ট আউটলেট এবং কয়ড়া ডাচ্ বাংলা আউটলেটের চাহিদাকৃত টাকা নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে যাওয়ার পথে উল্লাপাড়ার পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের এলাকায় ডাকাতরা একটি মাইক্রোবাস থেকে র্যাবের কটি পরে ৫-৬ জন ব্যক্তি রাস্তায় নেমে মোটরসাইকেলটি সংকেত দিয়ে থামায়। এ সময় র্যাবের পোশাকধারীরা দুজনকে তাদের বহনকৃত টাকার ব্যাগসহ জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নেয় এবং তাদের হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়, চোখ ও হাত বাঁধাসহ তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও চড়-থাপ্পড় মারে। এ সময় তাদের নিকট থাকা নগদ ২৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে তাড়াশ থানাধীন রাজশাহী-বনপাড়া মহাসড়কের হামকুরিয়া ৯ ও ১০ নম্বর ব্রিজের মাঝামাঝি স্থানে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দ্রুত চলে যায়। এ ঘটনায় উল্লাপাড়া মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, চাঞ্চল্যকর এই ডাকাতির ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন এই ডাকাতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সনাক্ত এবং গ্রেপ্তারের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. জিয়াউর রহমানের তত্ত্বাবধানে কামারখন্দ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আদনান মুস্তাফিজ, উল্লাপাড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অমৃত সূত্রধর এবং জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. একরামুল হোসেনসহ চৌকস পুলিশ অফিসারদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করেন। তারা তথ্য প্রযুক্তি ও নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত ডাকাতদের সনাক্ত করেন এবং ঢাকা, গাজীপুর, নাটোরসহ সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় নিদ্রাহীন, বিরামহীন ও নিরবচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করে ঘটনায় জড়িত ১১ জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, র্যাব ও ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে। তাদের নিয়মিত ডাকাতি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ১২ ডিসেম্বর সকাল থেকেই তারা উল্লাপাড়া থানা এলাকায় অবস্থান করছিল। গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত মো. রবিউল করিম শাহজাদপুর ডাচ্ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে চাকরি করত। তার দেওয়া তথ্যমতে অন্যান্য ডাকাতরা মেসার্স মীর ট্রাভেলস নামক ডাচ্ বাংলা এজেন্ট ব্যাংককে টার্গেট করে এবং দুইজন ডাকাত মোটরসাইকেলসহ ব্যাংকের আশেপাশে অবস্থান নেয়। পরে মামুনুর রশিদ ও জোনায়েদ রহমান মিরাজ টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে বের হওয়ার তথ্য দিলে মাইক্রোবাস থাকা র্যাবের কটি পরিধানকারী ডাকাতরা মোটরসাইকেলটির গতিরোধ করে মামুনুর রশিদ এবং জোনায়েদ রহমান মিরাজকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নেয় এবং তাদের মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে তাদের চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে দ্রুত চলে যায়। ডাকাতরা ডাকাতির টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়।
তাদেরকে গ্রেপ্তারের পরে ৭ জন ডাকাত ঘটনার সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, গত দু-তিন দিনে তাদেরকে বিভিন্ন জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর বিকেলে উল্লাপাড়ার বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়ক থেকে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের টাকা নিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় দুইজনকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। পরে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে জেলার তাড়াশ এলাকার মহাসড়কে অপহৃত দুজনকে নামিয়ে দেয় তারা।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য