সিরাজগঞ্জে

কাজীপুর বিএনপিতে কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপাকে নিয়ে দ্বন্দ্ব

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
কাজীপুর বিএনপিতে কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপাকে নিয়ে দ্বন্দ্ব

সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনক চাঁপাকে নিয়ে বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে কাজীপুরে আসেননি কনক চাঁপা। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর) আসন থেকে কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপাকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। কিন্তু মনোনয়ন পেলেও তিনি কাজীপুরে ঢুকতে পারেননি। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। হামলা, মামলা, বাড়ি ঘর ভাঙচুর, কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের পাশে থাকেননি কনক চাঁপা। এমন অভিযোগ কাজীপুর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর থেকে কাজীপুরের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন কনক চাঁপা। কাজীপুর উপজেলা বিএনপির বড় অংশ কনক চাঁপার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মতে, দল ও নেতাকর্মীদের দুর্দিনে কনক চাঁপার খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি যোগাযোগ বন্ধ রেখেছিলেন। সুতরাং, কনক চাঁপার উপর ক্ষুব্ধ দলীয় নেতাকর্মীরা।

২০১৩ সালের ১৫ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ৬৯তম জন্মদিনে গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন রুমানা মোর্শেদ কনক চাঁপা। এরপর ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (সিরাজগঞ্জ-১) কাজীপুর আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপা। নির্বাচনে তিনি মোহাম্মদ নাসিমের কাছে পরাজিত হন। এরপর কনক চাঁপা আর কাজীপুরে আসেননি।

২০২০ সালের ১৩ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান বর্তমান কাজীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা। বর্তমানে সেলিম রেজা কাজীপুর উপজেলা বিএনপির হাল ধরে রেখেছেন।

দীর্ঘ দিন পর, গত ৩ জানুয়ারি কাজীপুরে আসেন কনক চাঁপা। তিনি কাজীপুর উপজেলার সোনামুখী, মাইজবাড়ি, ঢেকুরিয়া বাজারে গণসংযোগ করেন। ৪ জানুয়ারি কাজীপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে দরিদ্র মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন। তবে তার সঙ্গে কাজীপুর উপজেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির কেউ ছিলেন না। তবে কাজীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রবিউল হাসান, কাজীপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক তরফদার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ইমরুল কায়েস সবুর উপস্থিত ছিলেন।

কম্বল বিতরণকালে কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপা বলেন, "আমার শৈশব কেটেছে এই কাজীপুরের মাটিতে। এই জন্মভূমিতে মিশে আছে আমার বাপ-দাদার স্মৃতি। আজও পরিবার-পরিজন নিয়ে এই মাটিতে বসবাস করছে আমার আপন ভাই তরু মোর্শেদসহ আত্মীয়-স্বজন। মাইজবাড়ির পৈতৃক বাড়িটি যমুনায় বিলীন হওয়ায় আমাকে লক্ষীপুরে ভাইয়ের বাড়িতেই উঠতে হয়। আমি মনে করি মাইজবাড়ির প্রত্যেকটি বাড়িই আমার বাড়ি। কাজীপুরে আমার নিজ নামে কোনো বাড়ি নেই। তাই আমি দ্রুত কাজীপুরবাসীর পাশে থাকার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করবো।"

উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রবিউল হাসান বলেন, "কনক চাঁপা এসেছিলেন, আমরা তাকে সহযোগিতা করেছি। দলের ভেতর দ্বন্দ্ব হলে তারাই করেছে। কনক চাঁপা বিএনপি করে, এজন্য আমরা তার পাশে দাঁড়িয়েছি।"

এ বিষয়ে কাজীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা বলেন, "আমরা কারো বিরোধিতা করছি না। তবে সত্য হলো, বিএনপি এবং দলের দুর্দিনে কনক চাঁপা দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন না। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। দলীয় নেতাকর্মীরা তার উপর ক্ষুব্ধ। ২০১৮ সালে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেও কাজীপুরে ঢুকতে পারেননি। এখন সুসময়ে তিনি কাজীপুরে এসেছেন। তবে আমাদের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেননি।"

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য