গাইবান্ধায়

মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌ খামারিরা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌ খামারিরা

সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ, দৃষ্টিজুড়ে হলুদের অপার সৌন্দর্যের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায়, শুধুই হলুদ রঙের বিস্তৃতি। সরিষা ফুলের সোনালী আভায় মোড়ানো মাঠগুলো যেন প্রকৃতির সাজানো হলুদ গালিচায় পরিণত হয়েছে। আর এই ফুল থেকে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌ খামারিরা। বছরের এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে মধু সংগ্রহ করে বাজারজাত করেন তারা।

ফলে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে, ঔষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ রোগ নিরাময়কারী এই মধু যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হচ্ছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর এ উপজেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ৭৮২ হেক্টর। এর মধ্যে অর্জিত হয়েছিল ১ হাজার ৭৮৪ হেক্টর। এবছর সরিষা চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৭৮৪ হেক্টর। এর মধ্যে অর্জিত হয়েছে ১ হাজার ৭৩০ হেক্টর।

প্রকৃতির এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মৌ খামারিরা জমির পাশে পোষা মৌমাছির বক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি এই দুই মাস খামারিরা মধু সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত থাকেন। এ মৌসুমে গাইবান্ধা সদর উপজেলার ঘাঘোয়া ইউনিয়নের তালতলা এলাকায় মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন সাতক্ষীরা, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ও গোবিন্দগঞ্জ থেকে ১০-১২ জন খামারি। সব মিলিয়ে ৭০০ টি মৌ বক্স বসেছে এই দিগন্ত মাঠ জুড়ে।

রংপুরের গংগাচড়া থেকে আসা জালাল উদ্দিন ও গোবিন্দগঞ্জ থেকে আসা আপেল মাহমুদ জানান, এই এলাকায় প্রচুর পরিমাণে সরিষা চাষ হওয়ায় তারা মধু সংগ্রহে এসেছেন। এ মৌসুমে ২৫০ টি বক্স স্থাপন করেছেন। এখানে আসার পর ১ মাসে তারা ৫০ মণ মধু সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এখন আর তেমন মধু পাওয়া যাবে না কারণ ফুলগুলো গাছ থেকে ঝড়ে পড়ছে। সরিষায় দানা আসতে শুরু করেছে, তাই তাদের যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। বিভিন্ন জাতের মধুর বিভিন্ন দাম। বর্তমানে সরিষার মধু ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এছাড়া, তাদের একটি ফেসবুক পেজ আছে "আলো মধু" নামে, যেখানে নিয়মিত মধু বিক্রি করা হয়। পাইকারি দামেও মধু বিক্রি করা হয়।

দিনাজপুর জেলা থেকে আসা সাগর মিয়া বলেন, ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি এ পেশার সঙ্গে যুক্ত। শুরুতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছিল। মৌমাছি সংরক্ষণ ও উৎপাদনে তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না। পরবর্তীতে এ বিষয়ে কয়েকবার প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন সফলতার সঙ্গে মধু উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন। সরিষা, কালোজিরা, লিচু মৌসুমসহ বছরের ৬ মাস দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৌ-খামার স্থাপন করে মধু সংগ্রহের কাজ করেন। অফ-সিজনে বাড়িতে মৌমাছি সংরক্ষণের কাজ করেন।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শাহাদৎ হোসেন বলেন, রোপা আমন এবং বোরো চাষের মধ্যবর্তী সময় সরিষা চাষ কৃষকদের জন্য খুবই লাভজনক। একদিকে কৃষকরা সরিষা আবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, পাশাপাশি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষার তেলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবছর প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৩ হাজার ৫৭০ জন কৃষককে বিনামূল্যে সার ও সরিষা বীজ প্রদান করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা, সাদুল্লাপুর উপজেলা ও বিসিক গাইবান্ধা থেকে সরিষা ক্ষেতের পাশে প্রায় ৭০০ টি মৌ বক্স স্থাপিত হয়েছে এবং এসব মৌ বক্স থেকে গড়ে ৬ কেজি করে প্রায় ৪ মেট্রিক টন মধু উৎপাদিত হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের চাহিদা পূরণে অবদান রাখছে। মৌ বক্স স্থাপন করলে একদিকে যেমন মধু সংগ্রহ করা যায়, তেমনি পরাগায়ন ভালো হওয়ায় সরিষার উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষা এবং মধু দুটিই ভালো হবে। লাভবান হবেন কৃষক ও মৌ খামারিরা। এছাড়াও সরিষার মাঠগুলো গুলোর সৌন্দর্য উপভোগের জন্য দূরদূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসছে। তাই সরিষা আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য