ব্লগস্পটে শেয়ার করুন
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৪৬০১তম হয়ে জামালপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা এলাকার সাধারণ পরিবারের সন্তান মাইমুনা খাতুন। এক ঘণ্টার ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় মাইমুনা পেয়েছেন ৭৪ দশমিক ২৫, আর তার মেরিট স্কোর ১৭৪ দশমিক ২৫। ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তার ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র।
মাইমুনা খাতুন সাধারণ এক ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। বাবাসহ পরিবারের সবার মুখ উজ্জ্বল করেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়ার, যা এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। নিজের প্রচেষ্টা, পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় অদম্য মেধাবী মাইমুনা নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। কোনো বাধাই দমিয়ে রাখতে পারেনি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বেড়ে ওঠা এই শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের পথ চলাকে। অদম্য মাইমুনা এবার জামালপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
মাইমুনা খাতুন শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চন্দ্রকোনা বাজার এলাকার অতি সাধারণ পরিবারের সন্তান। তার বাবা মো. মর্তুজ আলী একজন ব্যবসায়ী এবং মা নাসরিন আক্তার গৃহিণী। দুই বোনের মধ্যে মাইমুনা বড়। ছোটবেলা থেকেই তিনি অদম্য মেধাবী ছিলেন।
মাইমুনা চন্দ্রকোনা বাজারের আঞ্জুমান একাডেমি থেকে ২০১৫ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর নকলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান এবং ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় একই স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন।
পরে ময়মনসিংহের শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজে ভর্তি হয়ে ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পান। এছাড়াও, মাইমুনা বিভিন্ন মেধা নির্বাচনী পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করেন। নকলা উপজেলা থেকে জামালপুর মেডিকেলে চান্স পাওয়া মাইমুনার পরিবার ও গ্রামে বইছে আনন্দের বন্যা।
মাইমুনা বলেন, "জামালপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়ায় প্রথমেই মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। আর সেই লক্ষ্যে আমি লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছি। সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেন একজন আদর্শবান ডাক্তার হয়ে নিজ গ্রামসহ উপজেলার দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি। আমার এই ভালো ফলাফলের পেছনে মা-বাবা ও শিক্ষকদের অবদান অপরিসীম।"
মেয়ের এই সাফল্যে আনন্দে কেঁদে ফেলেন মাইমুনার মা-বাবা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবা মর্তুজ আলী বলেন, "মেয়ের সাফল্যে খুব আনন্দ হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের পুরস্কৃত করেছেন। আমাদের মেয়ে যেন ভালো ডাক্তার হয়ে গরিব ও অসহায় মানুষের সেবা করতে পারে, সেজন্য সবার দোয়া কামনা করছি।" মাইমুনার মা নাসরিন আক্তার বলেন, "ছোটবেলা থেকেই মাইমুনা লেখাপড়ায় অদম্য মেধাবী ছিল। অবশেষে আমাদের পরিবারের সবার প্রচেষ্টা, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা এবং মাইমুনার নিজ প্রচেষ্টায় সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে।"
নকলা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. উমর ফারুক বলেন, "মাইমুনা খুবই মেধাবী ছাত্রী। সে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। আমাদের স্কুলের ছাত্রী এটা সত্যিই গর্বের। ছাত্র-ছাত্রীরা কর্মজীবনে ভালো করলে যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম হয়, তেমনি শিক্ষকদেরও সুনাম হয়। মাইমুনার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি। আশা করছি আমাদের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আরও মাইমুনা তৈরি হোক।"
মন্তব্য