ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের আর.এম.হাট কে উচ্চ বিদ্যালয়ে ছোট ভাইকে ভর্তি করাতে এসে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী শ্লীলতাহানির শিকার হন। বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী নুর নবী (৪২) এর বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সোনাগাজী-ফেনী আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করেন।
এই ঘটনা কেন্দ্র করে বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শতশত শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেন। তারা সড়ক অবরোধ করায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান, সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বায়েজিদ আকন এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আমিনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে যান। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
জানা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী তার ছোট ভাইকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করাতে আর.এম.হাট কে উচ্চ বিদ্যালয়ে আসেন। এই সুযোগে বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক না থাকার সময় অফিস সহকারী নুর নবী তার হাত ধরে টেনে নিয়ে স্কুল কক্ষে শ্লীলতাহানি করেন।
পরে ছাত্রীটিকে হুমকি দিয়ে ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার নির্দেশ দেন। এমনকি তার পরিবারের সব খরচ বহন করার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিদিন সকালে বিদ্যালয়ে এসে অনৈতিক কাজ করার প্রস্তাব দেন। ছাত্রীটি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং ২০ জানুয়ারি প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান শিক্ষক নুরুল আফছার, লুৎফুর নাহার এবং সুভর্ণ চক্রবর্তীকে নিয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটি ঘটনাটি সত্য বলে নিশ্চিত করে।
অভিযুক্ত অফিস সহকারী নুর নবী এর আগেও ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগে জেল খেটেছেন। শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন পিয়াস জানান, "বিগত দুই বছর আগে নুর নবীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। আমরা ভেবেছিলাম, তিনি ভালো হয়ে যাবেন। কিন্তু জামিনে বের হয়ে এসে পুনরায় একই কাজ করেছেন।"
অন্য শিক্ষার্থী আশরাফুল হক রেজবী জানান, "২০২২ সালের ২৫ জুলাই নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে নুর নবী পাঁচ মাস কারাগারে ছিলেন।"
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজানা আফরিন মিথিলা বলেন, "ছোট ভাইকে ভর্তি করাতে এসে যদি দপ্তরীর হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হতে হয়, এটি মেনে নেওয়া যায় না। অভিযুক্ত নুর নবীর বিরুদ্ধে তিন থেকে চারটি অভিযোগ রয়েছে। ২০২২ সালের ঘটনার পর যদি তাকে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হতো, তাহলে এ ঘটনা ঘটতো না।"
শিক্ষার্থী দিগন্ত চন্দ্র দাস জানান, "১৯ জানুয়ারি ঘটনার অভিযোগ দেওয়ার পর তিন দিন পার হলেও প্রধান শিক্ষক কোনো ব্যবস্থা নেননি। বরং স্কুলের সম্মান নষ্ট না করার জন্য ভুক্তভোগী ছাত্রীকে চুপ থাকতে বলেন। এ কারণে আমরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হয়েছি।"
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, "তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। অভিযুক্ত নুর নবীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।"
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আমিন বলেন, "তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থীর অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।"
ফেনী জেলা পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান জানান, "বিদ্যালয়ের ঘটনাটি থানার ওসি আমাকে জানিয়েছেন। পুলিশ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।"
মন্তব্য