গত ৪ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত স্কুলছাত্র শাহিন শেখ (১৬) কে গলা কেটে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শাহিন শেখের পরিবার।
আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন নিহত শাহিন শেখের বাবা বাবু শেখ।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত শাহিন শেখের বাবা বাবু শেখ বলেন, “গত ৪ আগস্ট সকালে ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয় আমার ছেলে শাহিন। যাওয়ার সময় বলে যায়, ‘আমি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যাচ্ছি’। ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে শহরের চৌরাস্তা মোড় এলাকায় মিছিলে শাহিনকে অনেকেই দেখতে পায়। এরপর থেকে শাহিন আর বাড়ি ফেরেনি। সন্ধ্যা পর্যন্ত সে বাড়ি ফিরে না আসায় অনেক খোঁজাখুঁজি শুরু করি, কিন্তু কোথাও শাহিনকে খুঁজে পাইনি।”
পরে লোকজনের মুখে শুনতে পাই, দুপুরের দিকে ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা করে। সেখানে ধাওয়া খেয়ে শাহিন আত্মরক্ষায় শহরের মুজিব সড়কের সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে আশ্রয় নিলে, তাকে গলা কেটে হত্যার পর মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে রাতে জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে একটি কক্ষে দুটি লাশ পড়ে থাকতে দেখি। তার মধ্যে একটি লাশ আমার শাহিনের ছিল। কিন্তু পুলিশ না থাকায় লাশে আমরা হাত দিইনি। পরের দিন ৫ আগস্ট সকালে আবারও জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে আসি। এসে দেখি লাশ নেই। পরে জানতে পারি পুলিশ শাহিনের মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখে। শাহিনের শরীরের অধিকাংশ স্থান পুড়ে গেছে, গলা কাটা ছিল, চেনার উপায় ছিল না। কিন্তু আমার ছেলের পরনের জুতা ও শরীরের উচ্চতা দেখে চিহ্নিত করতে পারি এটি শাহিনের লাশ। আমরা লাশ বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে আরো একজন লাশের দাবি করে। পরে পুলিশ কাউকে লাশ দেয়নি। পরে আমরা ৬ আগস্ট সিরাজগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়রি করি (জিডি নং ২৪৭/২৪)।
এরপর পুলিশ গত সেপ্টেম্বর মাসে শাহিনের লাশের সাথে আমাদের ডিএনএ পরীক্ষা করায়। ৫ ডিসেম্বর ডিএনএ রিপোর্ট আদালতে দাখিল করে পুলিশ। ডিএনএ রিপোর্টে প্রমাণিত হয় শাহিন আমার ছেলে। ৭ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে শাহিনের লাশ আমার হেফাজতে নেওয়ার জন্য সদর আমলী আদালতে আবেদন করি। পরে আদালত শাহিনের লাশ আমার হেফাজতে দিতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়। গত শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) আমার ছেলের লাশ দাফন করি।
সংবাদ সম্মেলনে বাবু শেখ আরো বলেন, “আমার ছেলে শাহিন শেখ কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য বা কর্মী ছিল না। সে একজন সাধারণ ছাত্র। ছাত্র হিসেবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে শহীদ হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণেই আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই, এবং হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি। সরকারের কাছে আমি ন্যায় বিচার দাবী করছি। এবং হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি। এবং আমি এ বিষয়ে মামলা দায়ের করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
সংবাদ সম্মেলনে সিরাজগঞ্জের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য