পিরোজপুরের নেছারাবাদে

ভুল রিপোর্টের কারণে স্কুলছাত্রের পা হারানো

চিকিৎসা ব্যবস্থায় চরম অবহেলা

পিরোজপুর প্রতিনিধি
ভুল রিপোর্টের কারণে স্কুলছাত্রের পা হারানো

পিরোজপুরের নেছারাবাদে এক্স-রে টেকনোলজিস্টের ভুল রিপোর্টের কারণে মো. জিহাদুল ইসলাম (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রকে পা হারাতে হলো। জিহাদুল ইসলাম পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সোহাগদল গ্রামের মো. আমিনুল ইসলাম মিলন মিয়ার ছেলে। সে উপজেলার কলেজিয়েট একাডেমির নবম শ্রেণির ছাত্র।

ভুল এক্স-রে ও তার পরিণাম

গত ৮ জানুয়ারি জিহাদুল ইসলাম মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে ডান পায়ে আঘাত পান। ব্যথা অনুভব করায় তিনি নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক পায়ের গোড়ালির এক্স-রে করানোর জন্য তাকে হাসপাতালের পাশে অবস্থিত ‘হেলথ কেয়ার’ নামক বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান।

কিন্তু সেখানকার এক্স-রে টেকনিশিয়ান চিকিৎসকের দেওয়া পরীক্ষার কাগজ না দেখেই রোগীর কথামতো পায়ের হাঁটুর এক্স-রে করেন। ভুল রিপোর্টের ভিত্তিতে চিকিৎসক পুরো পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেন। আট দিন পর জিহাদুলের পায়ে পচন ধরে, যার ফলে চিকিৎসকদের তার পুরো পা কেটে ফেলতে হয়।

ক্ষোভ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা

জিহাদুলের সহপাঠীরা এই খবর শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং ৩০ জানুয়ারি দুপুরে ‘হেলথ কেয়ার’ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘেরাও করে। পরে নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

পিতার অভিযোগ

জিহাদুল ইসলামের পিতা আমিনুল ইসলাম মিলন অভিযোগ করেন, “ছেলেটি ২০ দিন আগে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে ডান পায়ে সামান্য ব্যথা পেয়েছিল। তখন নেছারাবাদ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক গোড়ালির এক্স-রে করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু ‘হেলথ কেয়ার’ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেকনিশিয়ান ভুল করে হাঁটুর এক্স-রে করেন। চিকিৎসক সেই রিপোর্ট দেখে হাঁটুতে ব্যান্ডেজ করেন, যার ফলে কয়েক দিনের মধ্যে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং পায়ে পচন ধরে। পরে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান, ছেলের গোড়ালির রগ ছিঁড়ে গিয়েছিল এবং ভুল চিকিৎসার কারণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। শেষ পর্যন্ত তার পা কেটে ফেলতে হয়েছে।”

স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া

স্বরূপকাঠি কলেজিয়েট একাডেমির শরীরচর্চা শিক্ষিকা আসমা বেগম বলেন, “জিহাদুল ইসলাম অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। সে একজন স্কাউট সদস্য ও টিম লিডার ছিল। তার ডান পা হারানোয় আমরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গভীরভাবে মর্মাহত।”

ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বীকারোক্তি ও চিকিৎসকদের বক্তব্য

‘হেলথ কেয়ার’ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক মো. মাসুদ রানা বলেন, “আমরা রোগীর কথামতো এক্স-রে করেছি। তবে ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশন দেখে এক্স-রে করলে হয়তো এই মারাত্মক ভুল হতো না। এটি টেকনিশিয়ানের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।”

নেছারাবাদ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত সহকারী সার্জন ডা. সুমন হালদার জানান, “পায়ের গোড়ালির এক্স-রে করার জন্য প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ ছিল, কিন্তু রোগীর কথামতো টেকনিশিয়ান হাঁটুর এক্স-রে করে। সেই রিপোর্টে সামান্য ফ্র্যাকচার দেখা যাওয়ায় পুরো পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়।”

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, “ভুক্তভোগীদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। তদন্তে অভিযুক্তদের দোষী প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মন্তব্য