পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার নাম জিয়ানগর পুনর্বহালের দাবিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে জনমত জরিপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার বালিপাড়া, পাড়ের হাটের টগরা কামিল মাদ্রাসা, উপজেলা পরিষদ হলরুম ও উপজেলা ভূমি অফিসে এই জনমত জরিপ অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান বিন মুহাম্মাদ আলী, বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং উপজেলার সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই জনমত জরিপে স্বাক্ষর করেন।
জিয়ানগর থেকে ইন্দুরকানী: নাম পরিবর্তনের পটভূমি
উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ২১ এপ্রিল পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাত্র তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে ‘জিয়ানগর’ উপজেলা গঠিত হয়। আল্লামা সাঈদীর আমন্ত্রণে জিয়ানগর উপজেলার উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
২০০২ সালে উপজেলা উদ্বোধনের পর থেকে ২০০৬ সালে আল্লামা সাঈদীর সংসদ সদস্যের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে জিয়ানগর উপজেলার সকল অবকাঠামোগত উন্নয়ন তার হাত ধরেই সম্পন্ন হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জিয়ানগর উপজেলার সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২০১৭ সালে উপজেলার নাম পরিবর্তন করে ‘ইন্দুরকানী’ রাখা হয়। তবে ২০১৭ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পর্যন্ত সরকারি নথিপত্রে উপজেলার নাম ইন্দুরকানী থাকলেও এলাকাবাসী শুরু থেকেই এই উপজেলাকে জিয়ানগর নামেই ডাকতেন।
নাম পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন ও জনমত
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর, সকল দল ও মতের মানুষের নিরঙ্কুশ সমর্থনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে গঠিত সেই সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ জনাব এ এফ হাসান আরিফ।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে জিয়ানগর উপজেলার নাম পরিবর্তন করে ইন্দুরকানী রাখার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিপ্লব পরবর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা জনাব এ এফ হাসান আরিফের সঙ্গে মাসুদ সাঈদী সাক্ষাৎ করেন। জিয়ানগর উপজেলাবাসীর পক্ষে তিন হাজারের অধিক মানুষের স্বাক্ষরসংবলিত নাম পুনর্বহালের আবেদন তিনি উপস্থাপন করেন।
তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এই জনমত জরিপ অনুষ্ঠিত হয়। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, অচিরেই উপজেলার নাম পুনরায় ‘জিয়ানগর’ করা হবে।
মন্তব্য