-->

সাংবাদিক হাবীবের মৃত্যু নিয়ে রহস্য!

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাংবাদিক হাবীবের মৃত্যু নিয়ে রহস্য!
হাবীবুর রহমান। ফাইল ছবি

দৈনিক সময়ের আলোর সিনিয়র রিপোর্টার হাবীবুর রহমান কীভাবে হাতিরঝিলে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশায় পুলিশ। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য ছাড়া আর কোনো তথ্য প্রমাণ এখনো সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশ বলছে, দুর্ঘটনাস্থলের পাশে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। দূরে একটি ক্যামেরা ছিল সেটির ফুটেজ কুয়াশার কারণে ঝাপসা দেখা গেছে।

এদিকে সাংবাদিক হাবীবুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় অপমৃত্যু মামলা করেছেন তার চাচা তারু মিয়া। এতে মৃত্যুর কারণ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে যায় র‌্যাব পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। মৃত্যুর কারণ জানতে তারা আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কেউই দুর্ঘটনার বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

তবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী দুর্ঘটনার বিষয়ে পুলিশের কাছে তথ্য দিয়েছেন। তার নাম রাসেল। তিনি তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা।

ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী রাসেল পুলিশকে জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাতে তিনি হাতিরঝিলের বেগুনবাড়ি প্রান্তে মসজিদের পাশে ছিলেন। আচমকা একটি শব্দ শুনতে পেয়ে সামনে গিয়ে দেখেন একটি মোটরসাইকেল পড়ে আছে।

ফুটপাতের সামনে একজন লোক পড়ে আছে। তার হেলমেটের সামনের দিকের গ্লাসটি ভাঙা ছিল। শরীর অক্ষত ছিল। তবে মুখ রক্তাক্ত ছিল। মুখ ও নাক ফেটে রক্ত বের হচ্ছিল।

রাসেল চিৎকার চেঁচামেচি করে আশপাশের লোকজনকে ডাকতে থাকেন। দ্রুতই তিনি জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দেন। পরে পুলিশের একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে হাবীবুর রহমানকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যায়। সেখানে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর হাবীব মারা যান। হাবীবের সঙ্গে তার কোনো কথা হয়নি।

বুধবার দিনভর তদন্তের পর বৃহস্পতিবার পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে আসার কথা ছিল রাসেলের। তবে তিনি মোবাইল বন্ধ রেখেছেন। ফোনে তাকে পাচ্ছে না পুলিশ।

মামলার তদন্তে ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা পায়নি পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরে একটি ক্যামেরা পাওয়া গেছে। তবে সেটির ফুটেজ ঝাপসা।

কর্তৃপক্ষ বলছে, কুয়াশার কারণে সেই ক্যামেরার ফুটেজ ঝাপসা এসেছে। হাবীবুর যেখানে ছিটকে পড়েন সেখানে ফুটপাতের মেরামত কাজ চলছিল, সেখানে স্ল্যাব রাখা ছিল। সেই স্ল্যাবে আঘাত পেয়ে তার মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে হাতিরঝিল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ‘আমরা প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছি। আশপাশের ভবন এবং সড়ক থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করছি। একটা সিসিটিভি পেলেও সেটার ফুটেজে স্পষ্ট কিছু পাইনি।’

হাতিরঝিল থানায় করা অপমৃত্যুর মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই মাসুদ খলিফা। তিনি বলেন, ‘হাবীবুরের মরদেহের মুখ থেঁতলানো, চোয়াল বিচ্ছিন্ন, গাল এক ইঞ্চি কেটে ঝুলে গেছে। প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে আমরা অধিকতর তদন্ত করছি।

‘ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা এখনো সিসিটিভির কোনো ফুটেজ পাইনি। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।’

হাবীবুর সময়ের আলোর সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে আওয়ামী লীগ বিট কাভার করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ২০১৩ সালে মাস্টার্স শেষ করা হাবীব এক সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ছিলেন। রাজনীতি ও আওয়ামী লীগ বিটেই শুরু তার সাংবাদিকতা।

দৈনিক সময়ের আলোর হয়ে সদ্যসমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন নিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন করেছিলেন হাবীবুর রহমান। সাড়া জাগানো প্রতিবেদনের জন্য তিনি সময়ের আলোর ‘মাস সেরা রিপোর্টার’ সম্মাননাও পেয়েছিলেন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বেশ কয়েকবার নির্বাচন করেন হাবীব। প্রথম কার্যনির্বাহী সদস্য এবং পরে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।

মন্তব্য

Beta version