-->

বৈধ পেশার আড়ালে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈধ পেশার আড়ালে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তারা

নিরাপত্তাকর্মী, ফুল বিক্রেতা, গাড়িচালক, রাজমিস্ত্রি, কেউবা জমির দালাল। র‌্যাব জানায়, নিজেদের এই বৈধ পেশার আড়ালে তারা গড়ে তুলেছে একটি ভয়ংকর সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট। র‌্যাব জানায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সাতকানিয়ায় সহিংসতার ঘটনায় জড়িত আটজনকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ চট্টগ্রাম মহানগরী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বান্দরবান সদর ও ঢাকা মহানগরীর তেজকুনিপাড়া থেকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য বের হয়ে আসে।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুই প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। তারা ভাড়া করা অস্ত্রে ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা চালায়। ওই সহিংসতায় দুজন নিহত ও আহত হন অর্ধশতাধিক। পরবর্তীতে ভাড়া করা অস্ত্র লুকিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় তারা।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় ব্যবহৃত অস্ত্র কোথা থেকে কীভাবে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার কায়েস বেশ কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়ায় অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। অস্ত্র সংগ্রহ করে কায়েস তার বিশ্বস্ত সদস্যদের সরবরাহের দায়িত্ব দেন। তারা গ্রুপের অন্য সদস্যদের বিভিন্ন সময় সহিংসতায় ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করতেন। কাজ শেষে তারা স্থানীয় কবরস্থান ও পুকুরপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে সেসব অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন। তবে এবার নির্বাচনী সহিংসতার পরবর্তী পরিস্থিতির কারণে আত্মগোপন চলে যান তারা। ভাড়া করা অস্ত্র আর ফেরত দিতে পারেননি।

তিনি বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্ত্রধারী দুষ্কৃতিকারীরা ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতা চালান। ওই সহিংসতার ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রুজু হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশে বিঘ্ন ঘটায় গণমাধ্যমে সহিংসতাকারীদের চিহ্নিত করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখার তত্ত্ববধানে র‌্যাব-২, র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১৫ অভিযান পরিচালনা করে। গত সোমবার রাতে র‌্যাব-১৫-এর অভিযানে বান্দরবান সদর থেকে সহিংসতায় অংশগ্রহণকারী নাসির উদ্দিনকে (৩১) গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যমতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অভিযান পরিচালনা করে মো. মোরশেদ (২৬), কোরবান আলী (৩৭), মো. ইসমাঈলকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখার তত্ত্ববধানে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে র‌্যাব-২ এর অভিযানে রাজধানীর তেজকুনীপাড়া এলাকা থেকে সহিংসতার নেতৃত্ব প্রদানকারী মো. কায়েস (২২) ও তার সহযোগী নুরুল আবছারকে (৩৩) গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা সহিংসতার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে সহিংসতার ঘটনায় দুজন নিহত ও অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়।

সাতকানিয়ায় সহিংসতার ঘটনায় তার নেতৃত্বে জসিম, মোর্শেদ, মিন্টু, আবছারসহ শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালান। সহিংসতা পরবর্তীতে তিনি ঢাকায় আত্মগোপন করেন। সাতকানিয়া থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি কায়েস। এর আগেও তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় সহিংসতার মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার নাসির একটি কোম্পানির চট্টগ্রাম বন্দর শাখার কর্মচারী। তিনি ২০১১-১৩ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন। পরবর্তীতে দেশে এসে ঢাকার শাহবাগে ফুল বিক্রি করতেন। তিনি সহিংসতায় সশস্ত্র দলের নেতৃত্ব দেন। সহিংসতাকালে নাসিরকে মেরুন রঙের মাফলার ও মুখে লাল-সবুজ রঙের মাস্ক পরিহিত অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক হাতে দেখা যায়। গ্রেপ্তার আবছার ঢাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান সমিতির ম্যানেজার। সাতকানিয়ায় কোনো সহিংসতার সম্ভাবনা দেখা দিলে তিনি এলাকায় চলে আসতেন। নির্বাচনের পূর্বে ঢাকা থেকে সাতকানিয়ায় যান এবং কায়েসের নির্দেশে সাতকানিয়ার খাগরিয়াতে সহিংসতাকালীন সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্ব প্রদান করেন। আবছারকে ঢাকার তেজকুনীপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মন্তব্য

Beta version