-->
শিরোনাম
মহসীনের আত্মহত্যা

লাইভ দেখাদের চিহ্নিত করছে সিআইডি

নিজস্ব প্রতিবেদক
লাইভ দেখাদের চিহ্নিত করছে সিআইডি

ফেসবুক লাইভে এসে সাড়ে ১৬ মিনিটের বেশি সময় থাকার পর নিজের পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করেন চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর আবু মহসীন খান। তিনি যখন লাইভ করছিলেন, যারা দেখেছিলেন তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে সিআইডি।

সিআইডি প্রধান বলেন, মহসীন খান যখন লাইভ শুরু করেছিলেন তখন কারা কারা লাইভ দেখছিলেন, আমরা সাইবার পুলিশ থেকে তাদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। তবে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্য কাউকে দোষারোপ নয়, তাদেরকে সচেতন করা। যাতে করে ভবিষ্যতে তারা সচেতন হয়ে আমাদের জানাতে পারেন।

গতকাল বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান এসব কথা বলেন। মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে মহসীন খানের আত্মহত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি এসব কথা বলেন।

সিআইডি প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, কেন এ লাইভের ঘটনা সিআইডি জানতে পারল না? সিআইডির সাইবার পুলিশ অফিসারদের নিয়ে আমি বসলাম, আমার দায়িত্ব কি নেই? আমি কি পারতাম না এটি প্রতিরোধ করতে? এ বিষয়ে কেউ আমাকে দোষারোপ করেনি। আমি নিজে দেখে নিজেকেই দোষারোপ করেছি। এরপর বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকের সিঙ্গাপুর কেন্দ্রীক অফিসে জানতে চাইলাম। ফেসবুক আমাদেরকে জানাল, লাইভের প্রথমে মহসীন খানের কথা স্বাভাবিক ছিল। তিনি আত্মহত্যা করবেন এমনটা তাদের মনে হয়নি।

তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর ফেসবুকের অফিস থেকে আমাদের জানাল, উনি (মহসীন) সাড়ে ১৬ মিনিটের বেশি লাইভে ছিলেন। কিন্তু প্রথম দিকে তিনি যেভাবে কথা বলছিলেন তারা (ফেসবুক) বুঝতে পারেনি মহসীন খান আত্মহত্যা করবেন। প্রথমে তিনি পরিবার, ব্যক্তিগত জীবন, ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন। যার ফলে ফেসবুক আত্মহত্যার বিষয়টি বুঝতে পারেনি।

তিনি আরো বলেন, লাইভের শেষের আড়াই মিনিট আগে ফেসবুক বুঝতে পারে মহসীন খান আত্মহত্যা করবেন। ফেসবুককে অনুরোধ জানানো হয়েছে, যেন তারা আত্মহত্যা রোধে ভবিষ্যতে আমাদের সঙ্গে কাজ করে। আত্মহত্যা রোধে সিআইডি কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এর প্রসার ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করবে বলেও জানান তিনি।

ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার নামে দেশে একটি ভালো ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে সিআইডি প্রধান বলেন, আত্মহত্যা রোধে সিআইডি ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারের সঙ্গে কাজ করতে চায়।

এসময় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ প্রসঙ্গে সিআইডি প্রধান বলেন, চালুর পর থেকে চার বছরে ফোনে সাড়া দিয়ে এক হাজার ৪৯২টি আত্মহত্যা ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। একই সময়ে ফোনে সাড়া দিয়ে এক হাজার ১৩৫টি মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা সবাই আত্মহত্যা করেছেন।

তিনি জানান, ২০১৭ সালে চালু হওয়া জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ বর্তমানে প্রায় ৫০০ জনবল নিয়ে কাজ করছে। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯৯৯-এ প্রায় সাড়ে তিন কোটি কল এসেছে। এরমধ্যে এক কোটি ১৫ লাখ ফোন কলের সেবা দেওয়া হয়েছে, যা মোট কলের ৩৩ শতাংশ। এরমধ্যে ৭৮ ভাগ পুলিশি সেবা, ৯ ভাগ ফায়ার সার্ভিস এবং ১১ ভাগ অ্যাম্বুলেন্স সংক্রান্ত সেবা।

অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক তবারক উল্লাহ বলেন, ৯৯৯-এর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এক হাজার ৪৯২টি আত্মহত্যা নিয়ে ফোন কল এসেছে, যা আমরা প্রতিরোধ করতে পেরেছি। তবে কয়েকজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এর বাইরে আত্মহত্যার ফোন পেয়ে এক হাজার ১৩৫টি আত্মহত্যাজনিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

৯৯৯-এর এ কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ অটো কলার লোকেশন না থাকায় অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। কলারের লোকেশন আমরা যত দ্রুত পেয়ে যাব, তত দ্রুত যে কোনো সমস্যার সমাধান করা সহজ হবে। ৯৯৯-এ অটো কলার লোকেশন যুক্ত করতে কাজ চলছে।

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নেজাম উদ্দিন আহমেদ, ফিজিশিয়ান, কাউন্সিলর এবং সাইকোথেরাপি প্রাকটিশনার ফোনিক্স ওয়েলনেস সেন্টারের প্রফেসর ড. সানজিদা শাহরিয়া, ড. আহসান উদ্দীন আহমদ, ইশরাত জাহান বিথী, অরুপ দাস ও তারেক মিয়াজি।

মন্তব্য

Beta version