১০ আইনজীবীর হাইকোর্টে আবেদন

শরীফকে নিয়ে বেকায়দায় দুদক

জুনায়েদ হোসাইন
শরীফকে নিয়ে বেকায়দায় দুদক
নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন বহিষ্কার হওয়া দুদকের সাবেক উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দীন।

দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে সদ্য অপসারণ হওয়া কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিনকে নিয়ে বেকায়দা পড়েছে দুদক। যদিও সমালোচকদের আহ্বানে প্রেস ব্রিফিং করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন কমিশন সচিব।

গতকাল রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী ওই ব্রিফিং-এ দুদক সচিব মাহবুব হোসেন ১৩টি পয়েন্টে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তার ৫ পৃষ্ঠার বক্তব্যের পুরোটাই ছিল শরীফকে অপসারণের বিভিন্ন যুক্তি ও প্রমাণ। যদিও এই কর্মকর্তাকেই দুদক ২০১৭ সালে তার বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) অতি উত্তম এবং ২০১৯ সালের উদ্যমী ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করে।

এদিকে চাকরিচ্যুত উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের কারণ খতিয়ে দেখতে এবং তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টে চিঠি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।

হাইকোর্ট রুলস অনুযায়ী এই চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। আগামী বুধবার শুনানি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক জানান।

চিঠি প্রদানকারী আইনজীবীরা হলেন- অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, রেজওয়ানা ফেরদৌস, জামিলুর রহমান খান, উত্তম কুমার বণিক, মুস্তাফিজুর রহমান, মো. তারেকুল ইসলাম, আহমেদ আবদুল্লাহ খান, সৈয়দ মোহাম্মদ রায়হান, মো. সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নোয়াব আলী।

অন্যদিকে দুদক কর্মচারী চাকরি বিধিমালা, ২০০৮- এর বিধি ৫৪ (২) বাতিলের দাবিতে দুদকে নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে যে দাবি উঠেছে, সে প্রসঙ্গে দুদক সচিব কোনো উদ্যোগের কথা না জানালেও সবার ক্ষেত্রে এই বিধি প্রয়োগ হবে না বলে আবারও আস্বস্ত করেছেন। আর এই বিধি শরীফের ক্ষেত্রে প্রথম প্রয়োগ হয়েছে বলে প্রেস ব্রিফিং-এ জানিয়েছেন তিনি।

দুদক সচিব দাবি করেন, অপসারণের আদেশ জারির পর থেকেই বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিষিয়টি প্রচারিত হচ্ছে। মূলত একতরফা তথ্যের ভিত্তিতে এই সংবাদসমূহ প্রচারিত হচ্ছে। যা প্রকৃত ঘটনার বিপরীত।

দুদক সচিব বলেন, শরীফ উদ্দিন কিছু মামলাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রচার করেছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাই প্রভাবশালীদের চাপে তাকে অন্যায়ভাবে অপসারণ করা হয়েছে মর্মে তিনি যে দাবি করেছেন মিডিয়ায় তাই প্রচার করা হয়েছে, যা প্রকৃত ঘটনা নয়। এটা মোটেও সত্য নয়।

তিনি বলেন, কমিশনের প্রায় সব অনুসন্ধান ও তদন্ত কর্মচারী চট্টগ্রাম বা কক্সবাজারের সংশ্লিষ্ট মামলায় উল্লিখিত অভিযুক্ত বা আসামিদের অপেক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালতে বিচারের পর তাদের সাজাও হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করেন নাই। তাদের কারো কারণে কমিশনকে এভাবে বিব্রত হতে হয়নি।

দুদক সচিব বলেন, শরীফ উদ্দিন বিধি লঙ্ঘন করে ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেন। উদ্ধার হওয়া ৯৩ লাখ টাকা এক বছরের বেশি সময় ধরে নিজের হেফাজতে রাখেন। জবানবন্দি দেবার সময় একজনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। কর্ণফুলি গ্যাস কোম্পানিতে নিজের ছোটভাই, আত্মীয়দের চাকরি দেন প্রভাব খাটিয়ে ও জাল কাগজ দিয়ে।

এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলির ৩ মাস পর তিনি শারীরিকভাবে অফিসে যোগ দেন। তাকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে দুদককে অবহিত করেননি। এভাবে তিনি একের পর এক শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করেন।

দুদক সচিব বলেন, শরীফ উদ্দিন একা একা রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ও নাগরিকত্ব প্রদানবিষয়ক অভিযোগ তদন্ত করেননি। বিষয়টি তদন্তের জন্য পরিচালক জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে ৬ সদসস্যের টিম ছিল। ওই টিমের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন শরীফ উদ্দিন।

এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সই করা এক প্রজ্ঞাপনে শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ - এর বিধি ৫৪ (২) তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো।

সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি পরিবারসহ হত্যার হুমকি পান বলে অভিযোগ শরীফ উদ্দিনের। পরিবারসহ হত্যার হুমকি পাওয়ায় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরী ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে সিসি টিভির ফুটেজসহ চট্টগ্রামের খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন। তাকে অপসারণের পর থেকে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

মন্তব্য