মোঃ সারোয়ার হোসেন। ৮ম শ্রেণী পাশ করেই বনে যায় 'জ্বীনের বাদশা'। মাদ্রাসায় পড়ালেখা না করলেও এবং চিকিৎসাবিদ্যায় প্রশিক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও নিজেকে চিকিৎসক ও মাওলানা পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে আসছে সে। সাধারণ মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে নানা কৌশলে প্রতারণা করে আসছে 'জ্বীনের বাদশা ও তার সহযোগিরা।
শুক্রবার (১১ মার্চ) র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে.কর্ণেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন এসব তথ্য জানান।
র্যাব জানিয়েছে, ২০১৯ সালে সারোয়ার ও তার সহযোগিরা গাজীপুরের কাশিমপুরের লতিফপুর এলাকায় ভুয়া কবিরাজীর মাধ্যমে অসহায় মানুষের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে। পরবর্তীতে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতারণা সম্পর্কে জানার আগেই ঢাকার দক্ষিণখানস্থ ফায়দাবাদ এলাকায় আসে এবং পুনরায় সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করতে থাকে।
র্যাব জানায়, সম্প্রতি একটি চক্র ‘কাগজ হয়ে যায় টাকা’ ও ‘অসুস্থ হলে সুস্থ করে দেবে জ্বীন’ এ রকম নানা কৌশল অবলম্বন করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। এই চক্রের সদস্যরা সাধারণ নিরীহ মানুষকে রোগ হতে মুক্তিদান, স্বল্প সময়ে স্বাবলম্বী করে তোলার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।
বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী র্যাব-১ এর কাছে অভিযোগ দেয়। এই প্রেক্ষিতে র্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
৯ মার্চ রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার দক্ষিণখান থানাধীন ফায়দাবাদ কোর্টবাড়ী বাজার এলাকা থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এসময় তাদের কাছ থেকে ১টি পাসপোর্ট, ১টি চেকবই, ৭টি এটিএম কার্ড, ১টি জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, ১টি প্রেস আইডি কার্ড, ১টি ল্যাপটপ, ১টি ল্যাপটপের চার্জার, ২টি কলার মাইক্রোফোন, ১টি ইউটিউব ক্যামেরা, ৩টি ক্যামেরা স্ট্যান্ড, ১টি জন্মনিবন্ধনের কপি, ২টি সিসি ক্যামেরা, ২টি সাউন্ড বক্স, ১০টি হিসাবের খাতা, ৯০০ টাকা মূল্যমানের বাংলাদেশী জালনোট, ৬টি মোবাইল ফোন, ৯টি সিমকার্ড, নগদ ৯৮ হাজার ৪০০ টাকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফরম উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য প্রদান করেছে গ্রেপ্তারকৃতরা।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের সদস্য। মোঃ সারোয়ার হোসেন চক্রের মূল হোতা এবং বাকিরা সহযোগী। তারা সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষদের টার্গেট করত। বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্থান হতে হতদরিদ্র সাধারণ নিরীহ মানুষদের রোগ হতে মুক্তিদান, স্বল্প সময়ে স্বাবলম্বী করে তোলার প্রলোভন দেখাত তারা। এতে স্বল্প আয়ের মানুষরা সহজেই প্রলুব্ধ হত।
চক্রটি হতদরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা বাবদ প্রথম সাক্ষাতে ১ হাজার টাকা করে ফি গ্রহণ করে। পরবর্তীতে গরীব অসহায় রোগীদের নিকট হতে বিভিন্ন ধাপে ঝাঁড়-ফুক, জ্বীন তাড়ানোসহ ভুয়া কবিরাজি চিকিৎসার নামে ৫০-৬০ হাজার টাকা করে নিত। সাধারণ মানুষ তাদের প্রতারণা সম্পর্কে জানার আগেই চক্রটি তাদের অবস্থান পরিবর্তন করত এবং নতুন এলাকায় গিয়ে পুনরায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করত। এভাবে তারা শত শত সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
সারোয়ার তার সহযোগিদের সঙ্গে যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবত নিজেদের জ্বীনের বাদশা পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে।
প্রতারণার ফাঁদ হিসেবে প্রথমে ফেসবুক ও ইউটিউবে ‘মুমিন মুসলমান’ নামে চ্যানেল খোলে চক্রটি। পরবর্তীতে জ্বীন, জাদুটোনা, ব্ল্যাকমেইল, বদনজর, কুফরি কালাম, বান এর প্রভাবে মানুষের যে ক্ষতি হয়-তার সমাধান করতে পারে বলে ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত প্রচার করে।
বিজ্ঞাপন দেখে আরোগ্য হওয়ার আশায় দেশের বিভিন্ন স্থান হতে হতদরিদ্র অসুস্থ পুরুষ ও নারী চিকিৎসার জন্য আসত। এসব সহজ সরল, হতদরিদ্র, অসহায়, অসুস্থ নারী ও পুরুষদের নিকট নিজেকে 'জ্বীনের বাদশা' পরিচয় দিয়ে কবিরাজী চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে স্বীকার করেছে সারোয়ার।
মন্তব্য