-->
শিরোনাম

চোরাই মোটরসাইকেল সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড কে এই লিটন?

* ঘণ্টায় ঘণ্টায় স্থান পরিবর্তন করত চক্রটি * শোরুমের আড়ালে চলত প্রতারণা * পাঞ্চ করে বসানো হয় নতুন নম্বর * এই চক্রের সদস্য শতাধিক

ইদ্রিস আলম
চোরাই মোটরসাইকেল সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড কে এই লিটন?
লিটন দেওয়ান। ফাইল ছবি

লিটন দেওয়ান। পেশায় সেকেন্ডহ্যান্ড মোটরসাইকেল ব্যবসায়ী। এই ব্যবসার আড়ালে চোরাই মোটরসাইকেল কারবারের মাস্টারমাইন্ড তিনি। যার চক্রে রয়েছে শতাধিক সদস্য। চোরাই মোটরসাইকেল লিটনের কাছে বিক্রি হতো মাত্র ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। প্রথমে ফিল্মি স্টাইলে ও রাতের আঁধারে মোটরসাইকেল ছিনতাই। এরপর ফিরিয়ে আনা হয় নতুনরূপে। এর জন্য করতে হয় নম্বর অপসারণ। অবৈধভাবে পান্স করে বডিতে বসানো হয় নতুন নম্বর। এই নতুন নম্বরেই তৈরি করা হয় নম্বর প্লেট। এভাবেই ক্রেতাদের কাছে বৈধ করার কৌশল প্রয়োগ করে সিন্ডিকেট। গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এমনই একটি সিন্ডিকেটের সন্ধান মিলেছে রাজধানী মিরপুর-১ নম্বর শাহ আলী থানা এলাকায়। চিড়িয়াখানা রোডের ব্লক-বি, ২/১ নম্বর হাউসে রিয়েল বাইক হাউস নামের একটি শোরুমের আড়ালে চলে এই চোরাই মোটরসাইকেল কেনাবেচার ব্যবসা। এর আগে ভুক্তভোগীর অভিযোগের পর দীর্ঘ এক মাস ধরে অনুসন্ধানে নামে প্রতিবেদক। তাদের প্রতারণার প্রমাণ হাতে থাকার পরও ধরা যাচ্ছিল না তাদের প্রতারণা। কৌশল পরিবর্তন করে নাম-পরিচয় গোপন রেখে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে মেনেজ করে লিটনের সঙ্গে মদের বারে একটি আসর বসানো হয়। সেই সময় কিছুটা তথ্য আসে প্রতিবেদকের হাতে। যার ভিডিও চিত্র আছে ভোরের আকাশের কাছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই চক্রে রয়েছে প্রায় শতাধিক সদস্য। শুধু এই লিটন চক্রই নয়। ছিনতাইয়ের পর নতুন নম্বর প্লেট বসিয়ে বিক্রয় করার সঙ্গে যুক্ত রাজধানীর একটি বড় সিন্ডিকেট।

ভোরের আকাশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চক্রের প্রধান লিটনের কাছ থেকে টাকা দিয়ে ডিসকভার ১২৫ সিসি একটি মোটরসাইকেল কিনে প্রতারিত হন। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো-হ- ৫৭৯৫২০। সিøপ পরিবর্তন করে বিক্রি করে চক্র। এখানেই শেষ নয়। টাকা দিয়ে চোরাই মোটরসাইকেল কিনেও করেছেন হাজত বাস।

ভুক্তভোগী আল আমিন শিকদার ভোরের আকাশকে বলেন, তিনি বিক্রয় ডটকম ও বিভিন্ন মোটরসাইকেল বিক্রির পেজ থেকে মোটরসাইকেল কিনে আবার বিক্রি করেন। গত বছর কোরবানি ঈদের এক সপ্তাহ আগে লিটনের মালিকানাধীন রিয়েল বাইক হাউস থেকে ৮৫ হাজার টাকায় বাইক কেনেন।

তিনি জানান, এই মোটরসাইকেলটি চোরাই জানতে পেরেছি যখন হাজারীবাগ থানা আমাকে আটক করে নিয়ে যায়। এই গাড়িটি আমিসহ তিন হাতে বিক্রি হয়ে যায়। আমরা তিনজনই গ্রেপ্তার হয়ে হাজত বাস করেছি। টাকা দিয়ে কিনেও প্রতারণার শিকার ও আসামি হওয়া, যা হয়েছে এই লিটনের কারণে। তিনি আরো বলেন, সাত দিন জেল খেটে জামিনে বের হয়ে এসে লিটনকে জানালে সে আমাকে নানাভাবে হুমকি দেয় যেন আর না আসি। পরে বৃহস্পতিবার সে গ্রেপ্তার হয়।

অপর এক ভুক্তভোগী ফায়সাল হোসেন। লিটনের শোরুম থেকে পালসার ১৫০ সিসি কিনে কাগজ পরিবর্তন করতে গিয়ে মিরপুর বিআরটিএ থেকে চোরাই গাড়ি বলে রেখে দেয় পুলিশ। মূল হোতাকে ধরে দিতে বলেন কর্মকর্তা। কিন্তু লিটনের কাছে গেলে সে হুমকি দিয়ে মারধর করে তাড়িয়ে দেন। এখন গাড়িটি কোথায় আমি জানি না। পুলিশ ভালো ছিল বলে আমাকে গ্রেপ্তার করেনি।

গত বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগীর অভিযোগের সূত্র ধরে মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আ স ম মাহাতাব উদ্দিনের নির্দেশে এই চক্রের প্রধান লিটনকে ধরতে মাঠে নামে শাহ আলী থানা পুলিশ।  গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। পুলিশ জানায়, এই সিন্ডিকেটের প্রধানের নাম লিটন দেওয়ান। রাজধানীজুড়ে শতাধিক সদস্য রয়েছে এই সিন্ডিকেটের। এদের ধরতে ডিএমপির বিভিন্ন থানা-পুলিশ বেশ সজাগ থাকলেও এরা অনেক ধূর্ত। এক দিনের বেশি সময় থাকত না একই এলাকায়। স্থান পরিবর্তন করত ঘণ্টায় ঘণ্টায়।

এ বিষয়ে মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আ স ম মাহাতাব বলেন, একটি অভিযোগের ভিত্তিতে নিশ্চিত হন মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান তারই শাহ আলী থানা এলাকায় অবস্থান করছে। এর পরই এই থানার ওসি আসাদুজ্জামানকে অবহিত করে সিন্ডিকেট প্রধানসহ সহযোগীদের পাকড়াওয়ের নির্দেশ দেন।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এসআই রাকিব খান বলেন, আটকের সময় লিটনের ক্যাডাররা আমাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় তিনি সামান্য আহত হন। খবর পেয়ে ওসি আসাদুজ্জামান রাকিব খানকে উদ্ধার এবং আসামিদের থানায় আনতে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠান ঘটনাস্থলে। এ সময় পুলিশ লিটনের দখলে থাকা তিনটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করে।

মন্তব্য

Beta version