বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকায় গুলি ছুড়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় টিপু ছাড়াও কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতি (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিল মাসে একটি চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল প্রীতির। তিনি সংসারের হাল ধরবেন বলে আশা ছিল পরিবারের। বৃহস্পতিবার রাতে প্রীতির মৃত্যুতে তছনছ হয়ে গেছে সব স্বপ্ন।
জানা গেছে, প্রীতিদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। ঢাকার শাহজাহানপুরের কাছেই শান্তিবাগে তাদের ছোট্ট দুই কামরার বাসা। এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন প্রীতি। তার ছোট ভাই এসএসসি পরীক্ষার্থী। বাবার স্বল্প বেতনে দুজনের পড়ালেখার খরচ মিটিয়ে সংসার চালানো কঠিনই ছিল।
প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিন জানান, প্রীতি বদরুন্নেছা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু ফলাফল খারাপ হয়েছে। আবার দেবে ঠিক করেছিল। কথা ছিল এপ্রিলে ১৫ হাজার টাকা বেতনে একটা কোম্পানিতে চাকরিতে যোগ দেবে।
মিরপুর-২ নম্বরে একটি কোম্পানিতে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন জামাল উদ্দিন। স্ত্রী, এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে ও কলেজপড়ুয়া মেয়ে প্রীতিকে নিয়ে কোনোমতে তার সংসার চলছিল।
মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরীব মানুষ, মামলা করেই বা কী হবে? এগুলো (মামলা) নিয়ে ভাবতে পারছি না, মেয়েই আমার চলে গেল।
প্রীতি চার দিন আগে খিলগাঁওয়ের তিলপা পাড়ায় গিয়েছিলেন বান্ধবী সুমাইয়া আক্তারের বাসায়।
সুমাইয়া জানান, তার মা গ্রামের বাড়িতে যাওয়ায় প্রীতিকে কদিন বাসায় থাকতে বলেছিলেন। সেই অনুরোধেই চার দিন তার বাসায় ছিলেন প্রীতি।
বৃহস্পতিবার সুমাইয়ার বাসা থেকে নিজের বাসায় ফেরার জন্য তিলপা পাড়া থেকে রওনা হলেও প্রীতি কিছুক্ষণ পর ফোন করে খিলগাঁও রেলগেইটের কাছে যেতে বলেন সুমাইয়াকে। পরে সেখান থেকে দুই বান্ধবী আবার সুমাইয়ার বাসায় যাওয়ার রিকশা নেন।
রাত ১০টার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলী মানামা ভবনের সামনের সড়কে মাইক্রোবাসে থাকা মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে ঘটনাস্থলের কাছে রিকশায় থাকা প্রীতিরও গুলি লাগে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে টিপু ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মন্তব্য