-->
শিরোনাম

নজরদারিতে মাস্টারমাইন্ডরা, ফাঁসছেন এক কাউন্সিলর

এমদাদুল হক খান
নজরদারিতে মাস্টারমাইন্ডরা, ফাঁসছেন এক কাউন্সিলর
প্রায় এক দশক আগে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যা মামলার আসামি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু।

আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ও হত্যা পরিকল্পনায় কারা জড়িত তা নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মূলত, চাঁদাবাজি, ক্রীড়া ভবনের টেন্ডার, আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ ও দলীয় পদ নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বেই প্রাণ গেছে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুর। তাকে হত্যার পেছনে স্থানীয় এক কাউন্সিলরের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ওই কাউন্সিলরকে বেশ কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

বিশ্বস্ত একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা হত্যার নেপথ্যেও সকল রহস্য ইতোমধ্যে উদ্ঘাটন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাইল্যা পলাশ ও কিলার আব্বাসের সহযোগী মুসাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরিকল্পনাকারী একজনকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তদন্তে ঘুরেফিরে এ ঘটনায় জড়িত স্থানীয় এক কাউন্সিলরের নাম আসছে। তাকে বেশ কয়েকবার গোয়েন্দা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে। টিপু হত্যায় অস্ত্র ও মোটরসাইকেল সরবরাহ করেছিল কাইল্যা পলাশ।

ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে শুটার মাসুম আহম্মেদ আকাশ। তার দেয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া তাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে।

এদিকে সোমবার মধ্যরাতে টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলিকে র‌্যাব কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে সোমবার রাত ১০টার দিকে টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ১২টার দিকে তাকে আবার বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে গতকাল মঙ্গলবার ডলি সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু আমি তার ওয়াইফ, আমার সঙ্গে কোনো কথা শেয়ার করেছিল কি না, কোনো তথ্য আমি জানি কী না, কাউকে সন্দেহ হয় কী না- ইত্যাদি জানতে চেয়েছে র‌্যাব। এ ছাড়া ১০ নম্বর ওয়ার্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে।

মধ্যরাতে টিপুর স্ত্রীকে কেন ডেকে নেওয়া হয়েছিল জানতে চাইলে র‌্যাব- ৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দীন বলেন, কিছু বিষয় জানার জন্য আমরা তাকে ডেকেছিলাম।

গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলী এলাকার রাস্তায় অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪)। ওই সময় গাড়ির কাছেই রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফরান প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। ওই ঘটনায় পরদিন সকালে টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

নিহত টিপু প্রায় এক দশক আগে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। ৪-৫ দিন আগে ফোনে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন তার স্ত্রী। হত্যাকাণ্ডের তিন দিনের মাথায় রোববার বগুড়া থেকে মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ নামে একজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় গোয়েন্দা পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আকতার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আকাশই ‘মূল খুনি’। টিপুকে হত্যার জন্য তাকে ভাড়া করা হয়েছিল। তবে কারা, কেন টিপুকে হত্যা করার জন্য খুনি ভাড়া করেছে, সেসব প্রশ্নের উত্তর এখনো পুলিশ দিতে পারেনি। এ পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার রাতে কাউন্সিলর ডলির কয়েকজন রাজনৈতিক সহকর্মী খবর দেন, তাকে ‘নিয়ে’ গেছে র‌্যাব। পরে মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের বাগিচায় ডলিদের বাসার সামনে জনা চল্লিশেক নেতা-কর্মীর ভিড় দেখা যায়। বাসার সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা ছিল অনেক মোটরসাইকেল ও গাড়ি। তাদের কথায় জানা যায়, র‌্যাব আবার ডলিকে বাসায় ফিরিয়ে দিয়ে গেছে। তবে রাতে আর বাসায় ঢোকার অনুমতি মেলেনি সাংবাদিকদের।

একজন আত্মীয় বলেন, ডলি ‘বেশ অসুস্থ’। পা ফুলে যাওয়ার কারণে তিনি ঠিকমতো হাঁটতেও পারছেন না। তাই রাতে র‌্যাব কার্যালয়ে যেতে চাইছিলেন না। পরে কর্মকর্তাদের জোরাজুরিতে যেতে হয়, সঙ্গে তিনজন আত্মীয়ও গিয়েছিলেন। রাত ১০টার দিকে নিয়ে গিয়ে ১২টার পর ফিরিয়ে দিয়ে গেছে।

এরপর সকালে ফোন করলে কাউন্সিলর ডলি বলেন, পুলিশ কিলার ধরেছে। তবে কেউ তো তাকে টাকা দিয়ে ভাড়া করেছে। টিপুর সঙ্গে এ কিলারের তো সরাসরি কোনো বিরোধ নাই, দ্বন্দ্ব নাই। এটা ধরছে, তাতে আমি খুশি না। আমার কথা হচ্ছে, পরিকল্পনা করছে যারা, যারা এদেরকে ভাড়া করেছে, তাদের ধরতে হবে। আবার পরিকল্পনা যারা করছে, তাদেরও গডফাদার আছে, এরা কারা? এই দুইটা স্তর ধরে দিতে হবে। এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে এ ধরনের জঘন্য খুন-খারাবি বন্ধ হবে না। একজন কিলার ধরলেন, তার শাস্তি হলো, কিন্তু মাস্টারমাইন্ডরা ধরা পড়ল না। তাতে তো আমার আর আমার বাচ্চাদেরও জানের রিস্ক তৈরি হলো। আমি তখন তো নিরাপদে থাকব না। এই কথা গুলোই আমি র‌্যাবকে বলেছি।

ডলি বলেন, র‌্যাব আমাকে বলেছে, তারা আমাকে আরো আগেই ডাকত। কিন্তু আমার শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা এত দিন ডাকেনি। তারাও চায় টিপু হত্যায় যুক্ত সব স্তরের সবাইকে ধরতে। তারা বলেছে, এই খুনিচক্রের একদম শেকড় পর্যন্ত তারা ধরার চেষ্টা করছে। আর আমি আমার নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেছি। তারাও কথা দিয়েছে।

‘মাস্টারমাইন্ড বা গডফাদার’ হিসেবে র‌্যাবের কাছে কারো নাম বলেছেন কি না- এই প্রশ্নে টিপুর স্ত্রী বলেন, আমার হাজব্যান্ড তো আমাকে এ রকম কিছু বলেনি। আমি পলিটিক্যাল কর্নার থেকে যা যা জানছি সেটুকুই বলছি। আর গডফাদারের নাম তো শুনি। আমি তো তাদের চিনিও না।

মন্তব্য

Beta version