-->
শিরোনাম

একটি ধর্ষণ মামলার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর কাহিনি

রুদ্র মিজান
একটি ধর্ষণ মামলার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর কাহিনি
প্রতীকী ছবি

একটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলা। এক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক। এরপর বিয়ের প্রলোভন দিয়ে আবাসিক হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ। মামলা করার আগে সংগ্রহ করা হয় মেডিকেল সার্টিফিকেট।

এতেও মেলে ধর্ষণের আলামত। এ অভিযোগে গ্রেপ্তার হন আসামি। কারাগারে ছিলেন প্রায় দুই মাস। শেষ পর্যন্ত জানা গেছে, অভিযোগ মিথ্যা। নারী পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে কাজ করছিলেন এক মানবাধিকারকর্মী।

তাকে ফাঁসাতে মামলা করানো হয় ওই তরুণীকে দিয়ে। চক্রটির কাছে জিম্মি হয়ে মামলা করেন ওই তরুণী। তবে পুলিশের তদন্তে সত্যতা মেলেনি ধর্ষণের। শেষ পর্যন্ত বাদী নিজেই লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে জানান, এ মামলার নেপথ্যের চাঞ্চল্যকর তথ্য।

জানা গেছে, গত বছরের ১৫ জুন মানবাধিকারকর্মীকে আসামি করে মামলা করেন ১৮ বছরের তরুণী মনি (ছদ্মনাম)। মামলায় ঘটনাস্থল দেখানো হয় যাত্রাবাড়ীর পপুলার আবাসিক হোটেল, যা পাচারকারী চক্রের সদস্যদের মালিকানাধীন বলে ওই নির্যাতিতা জানান।

ওই মামলায় কারাগারে যেতে হয় আসামিকে। সূত্র মতে, মাদক ও অনৈতিক বাণিজ্যের তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরবরাহের কারণে ওই মানবাধিকারকর্মীর প্রতি ক্ষুব্ধ একটি চক্র।

যে কারণে ওই চক্রের কাছে জিম্মি থাকা নির্যাতিতা তরুণীকে দিয়ে ওই মামলা করানো হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে এ মামলার অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছে পুলিশ।

সম্প্রতি পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে মামলার নেপথ্যের তথ্য দেন ওই তরুণী। জানান, তার জীবনের করুণ ঘটনা, যা ইতোমধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

এতে প্রকাশ পেয়েছে, কীভাবে তাকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করানো হয়। কখন থেকে কীভাবে তাকে জিম্মি করা হয়। কীভাবে নির্যাতন করে তার নামের সঙ্গে একজন দেহ ব্যবসায়ীর তকমা লাগানো হয়।

ওই নির্যাতিতা তরুণী পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধনখালীর মনি (ছদ্মনাম)। মনির লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, তিনি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। প্রায় ৮ বছর আগে নারী পাচারকারী চক্রের সঙ্গে তার পরিচয়।

ওই সময়ে তিনি একজন কিশোরী। মনি তখন গ্রাম থেকে স্বজনদের সঙ্গে লঞ্চযোগে ঢাকা আসছিলেন। লঞ্চে পরিচয় হয় মোখলেছ, কবির, বাপ্পী ও পাপন নামে তিন ব্যক্তির সঙ্গে।

তারা মনিকে বাসা বাড়িতে কাজ দেওয়ার কথা বলে যাত্রাবাড়ীর ধলপুরে আনোয়ারা ওরফে আঙ্গুরীর (৫০) বাসায় রেখে যায়। ওই বাসায় তখন আরো কয়েক মেয়েকে দেখতে পান এ কিশোরী।

এসব মেয়েকে কক্ষে বহিরাগত পুরুষ আসা-যাওয়া করছিল। এসব দেখে ওই বাসা থেকে চলে যেতে চাইলে আনোয়ারা তাকে বাধা দেন। জানানো হয়, টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে তাকে। এখান থেকে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

শুরুতে অপকর্মে রাজি হয়নি মনি। বাধা দেওয়ায় তাকে বেদম মারধর ও চুল কেটে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে গণধর্ষণের শিকার হন সেদিনের কিশোরী মিন। জিম্মি করার জন্য নানা দৃশ্যের ভিডিওচিত্রও ধারণ করে রাখা হয়।

সেইসঙ্গে পেশাদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে নিজেদের জিম্মায় রাখতে পুলিশি অভিযানে তাকে ধরিয়ে দেওয়া হতো। আবার তারাই ছাড়িয়ে আনত। এভাবেই শুরু হয় কিশোরী মনির অন্ধকার জীবন।

এ চক্রের হাতে জিম্মি মনি বাধ্য হয়ে তাদের কথামতো ধর্ষণ মামলা করেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।

এ বিষয়ে ওই তরুণীর করা মামলার আসামি বলেন, মানবাধিকার সংগঠনের কাজ করতে গিয়ে একটি চক্রের শত্রæতে পরিণত হই। তারাই একজন তরুণীকে নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করে।

আমার সামাজিক মর্যদানাহানি করে। এ চক্রটি নানা অভিযোগ দিয়ে আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের অপকর্ম প্রকাশ পাচ্ছে।

এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই মাদকসহ নানা অপকর্মে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ বিষয়ে নিরাপত্তা চেয়ে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন স্থানে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আক্তার হোসেন জানান, ওই তরুণীর মামলা তদন্তে করতে গিয়ে জানা গেছে, তার অভিযোগ মিথ্যা। তিনি ওসিসি ও ফরেনসিক যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তা ভুয়া।

যে কারণে ওই মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য

Beta version