-->
শিরোনাম

টিপু হত্যা: পরিকল্পনাকারী দামাল রিমান্ডে

এমদাদুল হক খান
টিপু হত্যা: পরিকল্পনাকারী দামাল রিমান্ডে
আরফান উল্লাহ দামাল

# হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার হয় দুটি আগ্নেয়াস্ত্র # রুপালি ক্লাবের বৈঠকে অংশ নেয় ৬ সন্ত্রাসী

রাজধানীর শাহজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যায় ব্যবহার করা হয়েছে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র।

হত্যায় শুটার সন্দেহে আরফান উল্লাহ দামাল নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ। তার কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার মতিঝিল থানায় করা অস্ত্র মামলায় দামালকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন আরা এই আদেশ দেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের (প্রসিকিউশন) উপপরিদর্শক (এসআই) শওকত আকবর জানান, ঢাকার মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যার ঘটনায় আরফান উল্লাহকে (দামাল) আটক করা হয়।

তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার রাতে একটি রিভলবার উদ্ধার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মতিঝিল থানাধীন কমলাপুরের বস্তি থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় আরফান উল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ।

এই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আরফানকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আরফানকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।ডিবি ও স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরফান উল্লাহর এখন দলীয় কোনো পদ নেই। তবে এলাকায় তিনি যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত।

কমলাপুর রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজের পেছনে রূপালি সমাজ উন্নয়ন সংস্থায় (রূপালি ক্লাব নামে পরিচিত) তার আড্ডা ছিল। আরফানের তথ্যের ভিত্তিতে ওই ক্লাবের পেছনের বস্তির একটি ঘর থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়।

অন্যদিকে ফ্রিডম মানিকের ক্যাশিয়ার মারুফ হোসেনকে আটক করা হয়েছে। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মারুফ জানিয়েছে, মতিঝিলের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাঁদাবাজির তোলা টাকার ভাগবাটোয়ারা ও বাইরে পাঠানোর কাজ তিনিই করতেন।

টিপু হত্যাকাণ্ডে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডস্থল থেকে উদ্ধার করা আলামত বিশ্লেষণ করে ডিবির কর্মকর্তারা এমনটি ধারণা করছেন। ঘটনাস্থল থেকে দুই ধরনের গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।

গুলির খোসার ভিন্নতার কারণে এই কর্মকর্তাদের ধারণা- টিপু হত্যাকাণ্ড একাধিক শুটার টিম ছিল। দুই ধরনের গুলির খোসার ধরন দেখে তারা এমনটা মত দিয়েছেন।

যদিও এসব আলামত পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডির কাছে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তাই চূড়ান্ত মতামত দিতে রাজি হননি।

ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞঅসাবাদে আটক দামাল কোনো তথ্য না দিলেও ডিবির কর্মকর্তারা ধারণা করছেন দামাল ভারতে আত্মগোপন করা ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম জাফর আহমেদ ফ্রিডম মানিকের হয়ে কাজ করে থাকে।

এ ছাড়া ফ্রিডম মানিকের ক্যাশিয়ার মারুফ হোসেনকে আটক করা হয়েছে। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মারুফ জানিয়েছে, মতিঝিলের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাঁদাবাজির তোলা টাকার ভাগবাটোয়ারা ও বাইরে পাঠানোর কাজ সে-ই করত।

অপরদিকে, টিপু হত্যার পেছনে কারা ছিল, কী কারণে হত্যা করা হয়েছে সেসব প্রশ্নের কোনো উত্তর জানে না গ্রেপ্তার মাসুম মোহাম্মদ আকাশ। সাত দিনের রিমান্ডের চতুর্থ দিন গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে সে

গুলি করার কথা স্বীকার করলেও এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ কী সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেনি। শুধু তার সঙ্গীর নাম পরিচয় দিয়েছে। আর বলেছে, তার নামে দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলা থেকে অব্যাহতির জন্যই এই হত্যাকাণ্ড অংশ নিয়েছে।

মোটরসাইকেল চালকের নাম পরিচয় ছাড়া আর কোনো তথ্য দেয়নি। এমনকি কার কাছ থেকে অস্ত্র গ্রহণ করেছে, গুলি করার পর কার কাছে গিয়ে অস্ত্র জমা দিয়েছে সে বিষয়েও কোনো তথ্য জানে না বলে দাবি করেছে।

ডিবি সূত্র জানায়, রিমান্ডে শুটার মাসুমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরো কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। এ ছাড়া মোল্লা শামীম ও ফারুক খান নামের দুজন সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে।

তারা পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিকের সহযোগী। এই দুই সন্দেহভাজনকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি আরফান উল্লাহকে আটক করে।

ডিবি ও স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরফান উল্লাহর এখন দলীয় কোনো পদ নেই। তবে এলাকায় সে যুবলীগের নেতা হিসেবে পরিচিত। কমলাপুর রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজের পেছনে রূপালি সমাজ উন্নয়ন সংস্থায় (রূপালী ক্লাব নামে পরিচিত) তার আড্ডা ছিল।

আরফান বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহর ভাই। ভাইয়ের আটকের কথা শুনেছেন উল্লেখ করে আহকাম উল্লাহ বলেন, আরফান ২০০০ সালে বিদেশে যাওয়ার আগে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ছিল।

২০১৩ সালে দেশে ফেরে। তিনি বলেন, ‘সে (আরফান) আমাদের পরিবারকে ডুবিয়েছে। তার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।’ আহকাম উল্লাহ নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক উকমিটির সদস্য বলে দাবি করেন।ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার রিফাত মোহাম্মদ শামীম বলেন, ‘জাহিদুল ইসলাম হত্যার পেছনে পলাতক শীর্ষ পর্যায়ের সন্ত্রাসীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

আমরা অস্ত্রসহ একজনকে আটক করেছি। অস্ত্রটি ফরেনসিক ও ব্যালিস্টিক পরীক্ষার পর জানা যাবে এই হত্যার ঘটনায় সেটি ব্যবহৃত হয়েছে কিনা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, রূপালি ক্লাবে বসে জাহিদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ওই বৈঠকে অপরাধ জগতের তিন শীর্ষ সন্ত্রাসী মানিক, জিসান ও বিকাশ-প্রকাশ গ্রæপের ছয়জন প্রতিনিধি অংশ নেয়।

তাদের মধ্যে রয়েছে সুমন শিকদার ওরফে মুসা, মোল্লা শামীম, ফারুক খান ও আরফান উল্লাহ। অপর দুজনের নাম সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বলতে রাজি হয়নি।

সূত্রটি আরো জানায়, ওই বৈঠকে মোল্লা শামীম ও ফারুক খানকে ‘শুটার’ ভাড়া করার দায়িত্ব দেয় মুসা। ডিবির ধারণা, ঘটনার দিন মোল্লা শামীমের মোটরসাইকেলে করে শুটার মাসুম ঘটনাস্থলে গিয়েছিল।

ডিবির একটি সূত্র বলছে, মাসুম হত্যাসহ পাঁচটি মামলার আসামি। তাকে ছয় লাখ টাকায় জাহিদুলকে হত্যার জন্য ভাড়া করা হয়। একই সঙ্গে মামলা থেকে বাঁচানোর আশ্বাসও দেওয়া হয়।

এজন্য মুসা তার আইনজীবীর কাছেও নিয়ে যায় মাসুমকে।

গত ২৪ মার্চ রাতে শাহজাহানপুর এলাকার ব্যস্ত সড়কে গাড়িতে থাকা জাহিদুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তখন এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন রিকশা আরোহী কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি।

মন্তব্য

Beta version