-->
টিপু হত্যাকাণ্ড

ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল হোতারা

এমদাদুল হক খান
ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল হোতারা

আড়ালেই থেকে যাচ্ছে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি হত্যাকাণ্ডের মূল হোতারা।

ঘটনার ২০ দিনেও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া মোটরসাইকেলচালক মোল্লা শামীম কোথায় আছে, তা-ও জানেন না তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

র‌্যাব ও ডিবি পুলিশের হাতে আটক ৬ আসামি রিমান্ড শেষে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। তবে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডরা।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা দেশের বাইরে থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ইন্টারপোলের সহায়তায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যায় সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না পরিবার, বন্ধু, প্রতিপক্ষ কাউকেই। এমনকি কারাগারে থাকা ক্যাসিনো ব্যবসায়ী, বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসীও আছেন এ তালিকায়।

পুলিশের দাবি, টিপুকে হত্যার প্রাথমিক পরিকল্পনা করেই বিদেশে পাড়ি জমান সুমন শিকদার মুসা। মামলায় গ্রেপ্তার কিলিং মিশনে থাকা অন্যরা জানিয়েছে, মুসার নির্দেশে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা।

ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আখতার জানান, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিমানে ওঠার ভিডিও পোস্ট করেছে মুসা। মোস্ট ওয়ান্টেড মুসা সত্যিই বিদেশে গেছে নাকি দেশেই কোথাও আত্মগোপনে আছে, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া তাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে। মুসাকে গ্রেপ্তার করা গেলে এ হত্যাকাণ্ডের জট অনেকটাই খুলে যাবে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বেশকিছু শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম এসেছে। পাশাপাশি আমরা যাদের গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করেছি, তাদেরও আমরা সন্দেহের বাইরে রাখছি না।

আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। সন্দেহের তালিকা থেকে নিহত টিপুর পরিবার, বন্ধু, ব্যবসায়িক বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কাউকেই বাদ দিচ্ছে না র‌্যাব। র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, কেউ সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়, সেটা পরিবারের লোকজন হলেও।

এ ছাড়া আন্ডারওয়ার্ল্ড ও যারা বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করছে, তারাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। তবে সবাই যে হত্যার সঙ্গে জড়িত, তা-ও নয়। এখানে হত্যার মোটিভ, প্রভোকেট করাসহ অনেক বিষয় রয়েছে। অনেকে আছে যেনে হয়তো চুপচাপ ছিল।

এরকম বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে আমরা তদন্ত করছি। সেই অর্থে এখানে কেউ সন্দেহের বাইরে না। মূল হোতা যে বা যারাই হোক, তাদের আইনের আওতায় না আনা গেলে লাশের সারি থামবে না বলে জানিয়েছেন নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর।

তিনি বলেন, শুটার মূল কোনো কিছু নয়। তাকে ভাড়া করা হয়েছে, সে খুন করেছে। তার এটা পেশা। কিন্তু কারা পরিকল্পনাকারী। যারা পরিকল্পনা করেছে, তাদের ওপরে যারা আছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

আমি আইনের প্রতি আস্থাশীল। পরিকল্পনাকারীদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান তিনি।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া মাসুম আহম্মেদ আকাশ। তার জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।

অন্যদিকে শনিবার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে গ্রেপ্তার ৫ আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিত ঢাকার মেট্রোপলিট ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারাহা দিবা ছন্দা তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরা হলো- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ ও আরফান উল্লাহ দামাল।গত ২৪ মার্চ রাত ১০টার দিকে জাহিদুল ইসলাম টিপু মাইক্রোবাসে করে শাহজাহানপুর আমতলা হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। শাহজাহানপুরে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ করে গুলি করে।

এতে টিপু ও তার গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় টিপুর গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক টিপু ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় পরদিন ২৫ মার্চ দুপুরে নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

মন্তব্য

Beta version