-->

স্বর্ণ চোরাচালান কোন পথে

ইদ্রিস আলম
স্বর্ণ চোরাচালান কোন পথে
প্রতীকী ছবি

স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ ও জনপ্রিয় রুট এখন আকাশপথ। বিমানকে নিরাপদ হিসেবে বেছে নিয়েছে চোরাকারবারিরা। এ লক্ষ্যে বিমান সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট চক্র। কোন সময়, কোন ফ্লাইট নিরাপদ সেটিও জানানো হয় কারবারিদের। এই অবৈধ কাজে বাংলাদেশকে নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, স্বর্ণ পাচারে বিশেষ করে মধ্যরাত ও ভোর রাতের ফ্লাইটকে বেচে নেওয়া হয়। এই সময় বিমানবন্দর এলাকা কিছুটা নীরব থাকে।

শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুর, দুবাই, কুয়েত, সৌদি আরব ও মালয়শিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে আসছে চোরাই স্বর্ণ। বাংলাদেশে আসার পর বেশিরভাগ স্বর্ণ পাচার হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারতে। অর্থাৎ অনেক ক্ষেত্রে স্বর্ণ চোরাচালানে বাংলাদেশকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সম্প্রতি বিমানের শৌচাগার, যাত্রী আসন, জুতার ভেতরে, পরিত্যক্ত অবস্থায় ও ময়লার ঝুড়িসহ বিভিন্ন গোপন স্থান থেকে জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ। এসব ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ও এপিবিএন পুলিশ চোরা কারবারিদের আটক করতে পারলেও মামলা তদন্তে ধরাছোঁয়ার বাহিরেই থেকে যাচ্ছে চক্রের গডফাদাররা। অন্যদিকে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আটক করা অমীমাংসিত স্বর্ণের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৯০১ কেজি। মামলা জটিলতার কারণে এ স্বর্ণ নিলামে তোলা যাচ্ছে না। পড়ে আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে। এতে সরকার ১ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা মোট স্বর্ণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৬০ কেজি ১০২ গ্রাম। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৫৯ দশমিক ২২৫ কেজি স্থায়ী। আর ২ হাজার ৯০১ কেজি অস্থায়ী। স্থায়ী স্বর্ণের মধ্যে ২ হাজার ২৯৯ দশমিক ৮৩০ কেজি রিজার্ভ হিসেবে বিভিন্ন রিজার্ভ ব্যাংক ও আইএমএফের জমা আছে।

অস্থায়ী ২ হাজার ৯০১ কেজি স্বর্ণের বর্তমান বাজার দর (প্রতি আউন্স ১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ টাকা হিসাবে) ১ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। মামলা জটিলতা ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে পড়ে থাকা স্বর্ণ নিলামে তোলা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকে সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক আটক স্বর্ণসংশ্লিষ্ট সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা থাকে। যতদিন ওই স্বর্ণের মামলা নিষ্পত্তি না হয় ততদিন বাংলাদেশ ব্যাংকে অস্থায়ী স্বর্ণ হিসেবে তা দেখানো হয়। মামলা নিষ্পত্তি হলে ওই স্বর্ণ নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হওয়া অর্থ সরকারের ঘরে রাজস্ব হিসেবে জমা হয়। গত এক যুগ ধরে মামলা জটিলতা ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে স্বর্ণ নিলাম না হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টে এই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ পড়ে আছে।

ঢাকা কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বৈধভাবে এসেছে ২০ হাজার ৬৯৪ দশমিক ৮৫১ কেজি স্বর্ণ, অর্থাৎ প্রায় ২১ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআরের ঢাকা কাস্টম হাউস শাহজালাল থেকে ৪৯৪ দশমিক ৯২২ কেজি স্বর্ণ জব্দ করেছে।

সরকারের স্বর্ণ নীতিমালার গেজেটে বলা হয়েছে, দেশে মজুদ করা স্বর্ণ, স্বর্ণের বার্ষিক চাহিদা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য নেই।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা দেশের অভ্যন্তরে স্বর্ণের প্রকৃত চাহিদার পরিমাণ বছরে সর্বনিম্ন্ন ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টন। এই চাহিদার আনুমানিক ১০ শতাংশ স্বর্ণ তেজাবি স্বর্ণের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়ে থাকে। এই ধারণার ভিত্তিতে বলা যায়, প্রতি বছর নতুন স্বর্ণের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রায় ১৮ থেকে ৩৬ টন, যার সিংহভাগ বৈধভাবে আমদানিকৃত স্বর্ণের মাধ্যমে পূরণ হয় না বলে আশঙ্কা করা হয়।

জানা গেছে, গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি স্বর্ণের বড় চালান জব্দ করেছে ঢাকা কাস্টম হাউস ও শুল্ক গোয়েন্দা ও এপিবিএন কর্তৃপক্ষ। আর এসব অভিযানই বলে শাহজালালে বেড়েছে স্বর্ণের চোরাচালান।

এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক জানান, শাহজালালে স্বর্ণ চোরাচালান রোধে কঠোর অবস্থানে আমরা। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কয়েকদিন পরপর অবৈধ পথে আসা স্বর্ণ উদ্ধার করে জব্দ করা হচ্ছে। তবে বৈধভাবে শুল্ক দিয়ে যাত্রীরা যে স্বর্ণ নিয়ে আসেন তা কোথায় যায় তা বলা কঠিন। অন্য কোথাও পাচার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা রোধ করবে বলেও জানান।

স্বর্ণ চোরাচালান সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টম হাউসের ডিসি (প্রিভেন্টিভ) মো. সানোয়ারুল কবীর জানান, আমরা বরাবরই স্বর্ণ চোরাচালান রোধে কাজ করে যাচ্ছি। গোপন সংবাদের ও নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে বেশ কয়েকটি চালান আটক করতে সক্ষম হয়েছি।

মন্তব্য

Beta version