ময়মনসিংহের ত্রিশালে জালিয়াতির মাধ্যমে কৃষকের জমি হাতিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার সাক্ষীদের ফাঁসাতে পরে হত্যা করা হয় রফিকুল ইসলাম নামে এক দপ্তরিকে। এরপর আরেক সাক্ষীর চাচা আবুল কালামকেও হত্যা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। মূলত বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার হত্যা মামলা থেকে বাঁচার জন্য তারা আরও দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তারা। এছাড়াও ভূমিদস্যু জিলানী বাহিনী ত্রিশালে জালিয়াতির মাধ্যমে কৃষকদের জমি দখল করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে অতিরিক্ত লাভে বিক্রি করত। এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করতে করত খুন।
র্যাব বলছে, এই তিন হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হলেন ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট জিলানী বাহিনীর প্রধান আব্দুল কাদের জিলানী (৪৭)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবশেষে র্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন জিলানীসহ তিন জন।
গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন-জিলানীর বড় ভাই লাল মিয়া (৫০) ও ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২৭)। বুধবার (২০ এপ্রিল) রাতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৪।
জানা গেছে, জিলানী খাগাটিপাড়া জামতলী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সোবহানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ ১১টি মামলা ও ১০টি সাধারণ ডায়েরি রয়েছে।
২০১৮ সালের ৩ জুলাই খুন হন ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের খাগাটিপাড়া জামতলী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন মাস্টার। তার ছেলে মাহমুদুল হাসান মামুন থানায় মামলা করেন। স্থানীয় মোবারক হোসেন ও তোফাজ্জল হোসেনসহ আটজনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তবে স্বজনদের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী আব্দুল কাদের জিলানী।
খাগাটিপাড়া জামতলী মাদ্রাসার দপ্তরি ছিলেন রফিকুল ইসলাম। ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল জমির বিরোধে তাকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তার স্ত্রী সালমা বেগম মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এতে আব্দুল কাদের জিলানীকেও অভিযুক্ত করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন মাস্টার হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি সাবেক ইউপি সদস্য মোবারক হোসেন জিলানীকে নিয়ে এলাকার একজনকে হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন বলে পুলিশের প্রতিবেদনে উঠে আসে। যার বলি হন রফিকুল ইসলাম।
এ হত্যা মামলার ১৭ নম্বর সাক্ষী সোহাগ মিয়া। অভিযোগ, দুই মামলার সাক্ষীদের থামাতে হত্যা বা হাত-পা কেটে ফেলার পুরস্কারও ঘোষণা করেন জিলানী। গত ১৪ এপ্রিল রাতে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন সোহাগ। তাকে বাঁচাতে যান দুই ভাই ও চাচা আবুল কালাম। হামলায় আহত হয়ে ১৫ এপ্রিল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আবুল কালাম। এ ঘটনায় সোহাগ বাদী হয়ে আব্দুল কাদের জিলানীসহ ৯ জনের নামে মামলা করেন। এই মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু মূলহোতা জিলানী থেকে যান অধরা। তিন খুনের ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিকার চেয়ে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে এলাকাবাসী।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৫ এপ্রিল আবুল কালাম আজাদের মৃত্যুর সংবাদ শুনে আসামিরা গ্রেপ্তার এড়াতে স্থানীয় একটি এলাকায় মিলিত হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। আসামি জিলানী ও রাকিব ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কান্দানিয়া এলাকার একটি বাড়িতে অবস্থান নেন। পরবর্তীতে গাজীপুর সদর থানার পিরোজালিতে অবস্থান নিলে সেখান থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামি লাল মিয়া প্রথমে ভালুকায় আত্মগোপন করে পরবর্তীতে গাজীপুর সদরের চান্দনা এলাকায় অন্য একটি বাড়িতে অবস্থান নেন। সর্বশেষ গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় অবস্থান নিলে সেখান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তাদের দেখানো মতে জিলানীর বাড়ির সামনের পুকুর থেকে দুটি চাপাতি, একটি দা, একটি লোহার রড, বেসবল খেলার ব্যাট সদৃশ্য ধাতবদণ্ড উদ্ধার করা হয় বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
মন্তব্য