একসময়ে পুলিশের তালিকাভুক্ত ১৯ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন ইব্রাহিম খলিল। রাজধানীর মিরপুর ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। পুলিশি চোখ এড়িয়ে দেশ ছেড়েছেন প্রায় আট বছর। তাকে ধরতে ইন্টারপোলের সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। ইন্টারপোলে জারি করা হয়েছিল রেড অ্যালার্ট। তারপরও তাকে ধরা যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইব্রাহিম বর্তমানে ইতালিতে বসবাস করছেন। সেখানে বসেই অপরাধজগত নিয়ন্ত্রণ করছেন এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বাহিনীর তিন শতাধিক ক্যাডার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা মিরপুর ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা। চাঁদবাজি, খুন, ছিনতাই, জমি দখল, অবৈধ বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ, ঠিকাদারি ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত এ বাহিনীর সদস্যরা। তাদের অত্যাচারের অতিষ্ঠ মিরপুর ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সাধারণ মানুষ।
* তিন শতাধিক ক্যাডার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মিরপুর ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে জামিনে মুক্তি পেয়েই পালিয়ে যান দেশের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহিম খলিল। ওই বছরের ১৬ মে ভোরে কঠোর গোপনীয়তায় তাকে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি দেয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, ওই দিনই বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে নির্বিঘ্নে ভারতে পাড়ি দেন তিনি। কারাগারে থাকা অবস্থায়ই বিদেশ পাড়ি দেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছিল তার ক্যাডাররা। ইব্রাহিমকে মুক্ত করার ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্থানীয় এক নেতা। এজন্য ইব্রাহিম তাকে নগদ কয়েক কোটি টাকা দেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। একই সঙ্গে ইব্রাহিম ভাষানটেক এলাকায় তার দখলে থাকা একটি অমীমাংসিত জমির সিংহভাগই ওই নেতাকে দিয়ে দেন।
ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ইব্রাহিম গ্রুপের তিন ক্যাডার অস্ত্রসহ ডিবির হাতে ধরা পড়ে। তাদের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে লোমহর্ষক অনেক তথ্য। বর্তমানে ইব্রাহিমের সেকেন্ডম্যান হিসেবে কাজ করছে যুবরাজ নামে এক সন্ত্রাসী। তার নেতৃত্বে এলাকা ভেদে কাজ করছে তিন শতাধিক সন্ত্রাসী। এদের মধ্যে ইব্রাহিমের পক্ষে উত্তর ভাষানটেক, বাগানবাড়ি এলাকায় জমি ভরাট, ঠিকাদারি ও চাঁদাবাজি, অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করেন খামার হোসেন; দেওয়ানপাড়া, মজুমদার মোড় তালিমঘর নিয়ন্ত্রণে কালা ইব্রাহিম; ভাষানটেক, টোনারটেকে বিল্লাল, ভাষানটেক ৪ নম্বর বটতলা বস্তি নিয়ন্ত্রণে কারেন্ট মিজান; শ্যামলবাংলা এলাকা নিয়ন্ত্রণে রনি; দেওয়ানপাড়া নিয়ন্ত্রণে আজমত দেওয়ান; ভাষানটেক অটোস্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণে স্ট্যান্ড সোহেল-মানিক; ভূঁইয়াপাড়া পশ্চিম মাটিকাটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে রূপচাঁন, বাবলু ও স্বপ্না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাফরুল এলাকার মানুষ সন্ত্রাসী ইব্রাহিমের নাম শুনলেই আতঙ্কিত হন। জীবনে কখনো ছাত্রদল কিংবা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থেকেও বিএনপি ও যুবদলের শীর্ষ নেতাদের ম্যানেজ করে বাগিয়ে নিয়েছিলেন কাফরুল থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের পদ। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা এই শীর্ষ সন্ত্রাসী দেশে থাকলেও তার গ্রুপকে এখন সমন্বয় করছেন তার স্ত্রী জ্যোৎস্না। বর্তমানে চারটি স্তরে বিভক্ত ইব্রাহিমের প্রায় ৩০০ ক্যাডার সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাচ্ছে। সাত-আটটি ভাগে বিভক্ত হয়ে তারা কাজ করছে। ইব্রাহিম গ্রুপের ক্যাডাররা বেশির ভাগই বয়সে কিশোর। ভ্যানচালক, গ্যারেজ মিস্ত্রি, গার্মেন্ট শ্রমিকের আড়ালে তারা এসব কাজ করছে।ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম রেজাউল করিম ভোরের আকাশকে বলেন, ইব্রাহিম বাহিনীর ক্যাডারদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগ না করায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবু তাদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ডিবি পুলিশ। সম্প্রতি এ গ্রুপের তিন সদস্য অস্ত্রসহ ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। তারা বর্তমানে কারাগারে আছে। এছাড়া ইব্রাহিমের সেকেন্ডম্যান যুবরাজকে ধরতে অভিযান চলছে। সে আত্মগোপনে আছে। আশা করছি, অচিরেই সে গ্রেপ্তার হবে।
বিদেশে অবস্থান করা সন্ত্রাসীরা তাদের এজেন্টদের মাধ্যমে ব্যাপকহারে চাঁদাবাজি কীভাবে করছে জানতে চাইলে মিরপুর জোনের উপপুলিশ কমিশনার আ স ম মাহাতাবউদ্দিন বলেন, আসলে অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আমাদের কাছে এমন কোনো অভিযোগ এখনো আসেনি। তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
মন্তব্য