-->
শিরোনাম

আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে হাতিয়ে নেয় লাখ টাকা

বাথরুমে ক্যামেরা বসিয়ে ভিডিও ধারণ : গ্রেপ্তার ২

এমদাদুল হক খান
আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে হাতিয়ে নেয় লাখ টাকা
প্রতীকী ছবি

প্রথমে সাবলেট ভাড়াটিয়া হিসেবে বাসায় উঠে। এরপর প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে বাথরুমে গোপন ক্যামেরা বসিয়ে ধারণ করে আপত্তিকর ভিডিও।

এসব ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে আসছে একটি চক্র। তাদের দাবিকৃত টাকা দিলেও মুক্তি মিলে না এ চক্রের হাত থেকে।

তারা একের পর দাবি করতেই থাকে। এমনকি ওই চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগী নারীদের শারীরিক সম্পর্ক করতেও বাধ্য করে।

সম্প্রতি নওগাঁ ও ঢাকা থেকে এ চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর ডিবি জানিয়েছে, তিন বছর ধরে অন্তত ২০ জনের কাছ থেকে তারা হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক লাখ টাকা।

ডিএমপির গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার তারেক বিন রশিদ জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সরকারি এক কর্মকর্তার ইমো নম্বরে একটি স্ক্রিনশট আসে।

এতে দেখা যায় তার স্ত্রীর আপত্তিকর দৃশ্য। সেটির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চাওয়া হয় ৮০ হাজার টাকা।

কিছু টাকা পাঠালেও মুক্তি মেলে না এই দম্পতির। প্রথমে সাধারণ ডায়েরি, পরে করেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা।

তদন্তে নেমে ডিবির সাইবার বিভাগ নওগাঁ ও ঢাকা থেকে কামাল মণ্ডল ও নাসির উদ্দিন দুজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি জানতে পারে, এরা মূলত প্রথমে সাবলেট হিসেবে বাড়ি ভাড়া নেয়।

এরপর পাশের রুমের ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে বাথরুমে ক্যামেরা স্থাপন করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে। এরপর সেই ভিডিও পাঠিয়ে টাকা দাবি করে।

আটকদের ফোন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত তিন বছর ধরে এ কাজ করছে তারা। এমন ঘটনা এড়াতে সাবলেট দেওয়ার আগে ভাড়াটিয়াদের তথ্য যাচাইয়ের পরামর্শ ডিবির এই কর্মকর্তা।এদিকে যশোরের কেশবপুরের এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক এবং অন্তরঙ্গ ছবি মোবাইলে ধারণ করে মনিরামপুরের দুই সহোদর।

মোবাইলে ধারণ করা ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূর কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী গৃহবধূ যশোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি (মনিরামপুর) আদালতে পর্নোগ্রাফি আইনে ওই দুই সহোদরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই নারী কেশবপুর উপজেলার বরণঢালি গ্রামের বাসিন্দা। তার স্বামী মালয়েশিয়ায় চাকরি করেন। আসামি ও বাদীর বাড়ি ভিন্ন উপজেলায় হলেও পাশাপাশি গ্রামে।

বাদীর স্বামী বিদেশ থেকে প্রচুর টাকা পাঠানোর বিষয়টি আসামিরা জানতে পারে। ফলে ওই টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে আসামি হারুন অর রশিদ বাদীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে।

বিভিন্ন সময় বাদীর সঙ্গে আসামি হারুন শারীরিক সম্পর্ক করে। যা হারুনের মোবাইল ফোনে ভিডিও এবং ছবি ধারণ করে। এসব কাজে আসামি হারুনকে তার ভাই কামরুজ্জামান টিটো সহযোগিতা করে।

আর ওই সব ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বাদীর কাছ থেকে ৯ লাখ ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হারুন।

এরপর বাদীর কাছ থেকে আরো টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় বাদীকে শারীরিক নির্যাতনের পর সব ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে হারুন নামে একটি এবং বস নামে আরেকটি আইডিতে ছেড়ে দেয় হারুন ও তার ভাই টিটো।

বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে দেখে এলাকার লোকজন বাদীকে জানায়। স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আদালতে এই মামলা করেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মিডিয়া মো. কামরুজ্জামান জানান, বর্তমানে দেশে একটি চক্র বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষকে ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এসব চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে।

মন্তব্য

Beta version