এতদিন কোথায় ছিলেন পি কে হালদার?

এম বদি-উজ-জামান
এতদিন কোথায় ছিলেন পি কে হালদার?

হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার(পিকে) হালদারকে প্রতিবেশি দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আটক করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) এবিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানে না।

তবে পি কে হালদারের ভারতে গ্রেপ্তারের সংবাদে প্রশ্ন উঠেছে, এতদিন পি কে হালদার কোথায় ছিলেন? এই প্রশ্ন ওঠার কারণ, এর আগে বাংলাদেশের হাইকোর্টে দাখিল করা পি কে হালদারের বিমান টিকিট, বিবিসিকে দেওয়া দুদক আইনজীবীর বক্তব্য, হাইকোর্টে দুদকের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী পি কে হালদারের কানাডা, সিঙ্গাপুর, দুবাই থাকার কথা। কিন্তু ধরা পড়লেন ভারতে। যদিও তিনি ভারত হয়েই বাংলাদেশ থেকে পালান।

হাইকোর্ট ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে পি কে হালদারের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। একইসঙ্গে পিকে হালদার ও তার মা, স্ত্রী, ভাইসহ ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ, সকল সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু পি কে হালদার এরও আগে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সড়কপথে দেশত্যাগ করেন। এর আগের দিন ২২ অক্টোবর তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দুদক। দুদকের এই তথ্য কোনো না কোনোভাবে জেনে যান পি কে হালদার। আর এ কারণে দুদকের ওই চিঠি ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে পৌঁছানোর আগেই তিনি দেশ ত্যাগ করেন।

এ অবস্থায় হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পর নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আদালতকে জানানো হয়, পি কে হালদার দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। ওই বছরের ২১ অক্টোবর আইএলএফএসএল-এর পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন বিমানের টিকিটের ফটো কপি দাখিল করেন হাইকোর্টে।

একইসঙ্গে আদালতকে জানানো হয়, পি কে হালদার ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে অ্যামিরেটস এয়ারলাইনস এর একটি ফ্লাইটে করে দেশে ফিরতে টিকিট কেটেছেন। ওইদিন বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। কিন্তু তিনি নির্ধারিত দিনে দেশে ফেরেননি। এবিষয়ে আগেই আইএলএফএসএল তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলনের মাধ্যমে ২৪ অক্টোবর দুদক ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে জানানো হয়, পি কে হালদার করোনা উপসর্গে আক্রান্ত। তাই তিনি এ মুহুর্তে দেশে ফিরছেন না।

এমন পরিস্থিতিতে ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর দুদক আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের জানান, পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এই আইনজীবীই বিবিসিকে জানিয়েছিলেন পি কে হালদার সিঙ্গাপুর বা দুবাইয়ে রয়েছেন। যদিও ওইসময় বিভিন্ন গণমসাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যে, পি কে হালদার কানাডায় রয়েছেন।

এদিকে গতকাল পি কে হালদার ভারতে আটকের পর দুদক আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের জানান, পি কে হালদারকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে তাকে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, তিনি(পি কে হালদার) যদি ভারতে কোনো অপরাধ করে থাকেন তবে আগে সেখানে বিচার হবে। এরপর তকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা যাবে।

উল্লেখ্য, পি কে হালদারের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় দুইহাজার তিনশ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক ৩৪টি মামলা করেছে। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

মন্তব্য