কম্পিউটারের মাধ্যমে পাসপোর্টের ঠিকানা পরিবর্তন ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ভুয়া প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স জালিয়াতি চেষ্টা করার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পল্টন মডেল থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. মাসুদ মিয়া, মো. কামাল হোসেন ও গোলাম কিবরিয়া। গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীর ফার্মগেট, খিলক্ষেত ও কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বুধবার দুপুরে পল্টন মডেল থানায় আয়োজিত এক সংবাস সম্মেলনে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আ. আহাদ সাংবাদিকদের বলেন বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি জনবান্ধব নাগরিক সেবা হলো পুলিশ ক্লিয়ারেন্স। অনলাইনে ফর্ম পূরণ করে নির্দিষ্ট টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর সেবাটি একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেওয়া হয়। নাগরিককে সেবাটি ডিএমপি স্বচ্ছতার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দিচ্ছে। যদি কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা থাকে, তাহলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবাটি সেই ব্যক্তি পাবে না। সেটার ওপর ভিত্তি করে যদি আবেদনকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা না থাকে তাহলে পুলিশ সিডিএমএস যাচাই করে আবেদনকারী ব্যক্তিকে দিয়ে দেয়। যদি কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকে, সেক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, গত ২০ এপ্রিল মো. মাসুদ মিয়া নাম জনৈক ব্যক্তি পুলিশ কমিশনার বরাবর অনলাইনে একটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করেন। যা যাচাই বাছাইকালে আবেদনে প্রদত্ত ঠিকানা ভুয়া পরিলক্ষিত হয়। তখন আবেদনে সংযুক্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলের প্রত্যয়নপত্রটি যাচাই করে প্রত্যয়নপত্রটির স্বাক্ষর ও প্রত্যয়নপত্রটি সঠিক নয় মর্মে ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান। যার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকালে ফার্মগেট থেকে আবেদনকারী মো. মাসুদ মিয়াকে এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খিলক্ষেত থেকে কামাল হোসেন ও কেরানীগঞ্জ থেকে মো. গোলাম কিবরিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মাসুদ মিয়ার বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য ৩০ হাজার টাকায় কামাল হোসেনের সাথে চুক্তি করে। কারণ তার নামে নরসিংদীর মাধবদী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। কামাল হোসেন আবার ২৮ হাজার টাকায় গোলাম কিবরিয়ার সাথে চুক্তি করে। গ্রেপ্তারকৃতদের অপরাধের প্রক্রিয়া সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরাসহ অজ্ঞাতনামারা পরস্পর যোগসাজশে মূল পাসপোর্টের তথ্য পাতা স্ক্যান করে। এরপর কম্পিউটারের মাধ্যমে জরুরী যোগাযোগের ঠিকানা পরিবর্তন করে। পরবর্তী সময়ে পল্টন মডেল থানা এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ভুয়া প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করে। এডিটকৃত পাসপোর্টের ফটোকপিতে সত্যায়নকারী ডাক্তারের জাল সীল মোহর ও জাল স্বাক্ষর সত্যয়ন করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করে। গ্রেপ্তারকৃত ও পলাতকদের বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক এবং জালিয়াতি চক্র। তারা দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সনদপত্র, জাল সিল তৈরি করে পাসপোর্টধারীর ঠিকানা পরিবর্তন করে এডিট করা পাসপোর্টের ফটোকপিতে জাল সিল ও স্বাক্ষর করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আবেদন করে আসছিল। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে বিভ্রান্ত করে টাকার বিনিময়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স তৈরি করে দেবে বলে প্রতারণা করছিল। চক্রটি কিছুদিন আগে ছয়টি ভুয়া আবেদন করেছিল, যা পল্টন থানা রিজেক্ট করে।
নগরবাসীর জ্ঞাতার্থে পুলিশ কর্মকর্তা আঃ আহাদ বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে ডিএমপির প্রতিটি বিভাগ স্বচ্ছতার সাথে অত্যন্ত দ্রুত ও স্বল্প সময়ে সম্মানিত নাগরিকদের এ সেবাটি দীর্ঘদিন যাবৎ অব্যাহত রেখেছে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য ব্যাংকে ৫০০ টাকা জমা দেওয়া ছাড়া অন্য কোন অর্থ প্রদান করতে হয় না। ডিএমপি এ ধরনের যে কোনো প্রতারণা এবং জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
মন্তব্য