-->
শিরোনাম

পাসপোর্ট অফিসে থামছে না দালালের দৌরাত্ম্য

ইফ্ফাত শরীফ
পাসপোর্ট অফিসে থামছে না দালালের দৌরাত্ম্য

ঢাকা: পাসপোর্ট অফিসে দালাল শব্দটি বেশ পরিচিত। সরকার পাসপোর্ট অফিস দালালমুক্ত রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকলেও সেবাগ্রহীতাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে এখনে অনেকেই দালালি করে থাকে। বেশিরভাগ সেবাগ্রহীতা সেজেই পাসপোর্ট অফিসের আশপাশে ঘুরতে থাকে।

এসব দালালের বিষয়ে বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস ঢাকার পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমরা লোকজনদের সতর্ক করছি- যেন কোনো দালালের মাধ্যমে কাজ না করায়। গ্রাহককে সতর্ক করার জন্য বেশকিছু দালালের ছবি বাইরে টাঙানো আছে। এমনকি বিলবোর্ডের মাধ্যমে প্রচার করছি কোনো দালালের সহায়তা নেবেন না। আমাদের হেল্পডেক্স আছে, অনুসন্ধান কেন্দ্র আছে। সেখানে গেলে আপনি সব ধরনের সহায়তা পাবেন। এখানে দুই ধরনের দালাল আছে। আমরা এদের থেকে দূরে থাকতে বলি।’

পাসপোর্ট অফিসের বাইরে কেউ যদি দালাল চক্রের প্রতারণার শিকার হন, তাহলে কিছু করার থাকে না জানিয়ে পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের বাইরে দুই ধরনের দালাল ঘুরোঘুরি করে। এক গ্রুপ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়, এরা হচ্ছে আশপাশে থাকা নেশাগ্রস্ত লোক। এরা যেন পাসপোর্ট অফিসের আশপাশে না আসতে পারে, সে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে বলে দেয়া আছে। আর এক ধরনের দালাল আছে শিক্ষিত দালাল। তারা আপনাকে হয়তো কাগজপত্র ফটোকপি করিয়ে দেবে। অথবা ফর্ম পূরণে সাহায্য করবে। এরা অফিসের বাইরে রাস্তায় ছাতার নিচে বসে থাকে। এদের মাঝেমধ্যেই উঠিয়ে দিই, তারা আবার চলে আসে। এদের আমি বার বার সরিয়ে দিয়ে কিছু করতে পারছি না। তবে পাসপোর্টে সহায়তার প্রয়োজন হলে আইনিভাবে একটি পাসপোর্ট সহায়তাকারী এজেন্ট নিয়োগ দিতে হবে। তাহলে দালালের এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে।’

প্রতিবন্ধীদের জন্য পাসপোর্ট অফিস আরো কীভাবে সহজ করা যায়- এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য পাসপোর্ট অফিসে ভালো সুবিধা দেয়া আছে। তাদের জন্য নিচতলায় ১০১ নম্বর রুমে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং বায়োমেট্রিক করানোর ব্যবস্থা রয়েছে। আর ডেলিভারির ক্ষেত্রে একটু ঝামেলা আছে। কারণ এটা একটা নেটওয়ার্কের বিষয়; এমনকি সিকিউরিটির বিষয়ও জড়িত আছে। এজন্য ডেলিভারি এক জায়গা থেকেই নিতে হয়। তবে শারীরিক অক্ষম ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কেউ চাইলে তার বদলে অন্য কাউকে অথরাইজড করে দিতে পারবে। যে কিনা তার পক্ষ হয়ে পাসপোর্ট ডেলিভারি নিতে পারবে। আমরা যদি বড় পরিসরে জায়গা পাই, তাহলে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে জানান তিনি।

পাসপোর্ট সেবাকে কীভাবে আরো উন্নতি করা যায়- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা তাদের সরেজমিন দেখে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয় সমাধানের কাজ করতে হবে। আমি সেবা দিতে দিতে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি, আমার কোনো শক্তি নেই। আর পাবলিক মনে করছেন, কর্মকর্তারা কোনো কাজই করে না। এ দুইয়ের মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়ের অভাব আছে। আর এটাকে সমাধান করতে হলে ঢাকা শহরের ২ কোটি মানুষের জন্য কমপক্ষে হলেও ২০টা অফিস করতে হবে। দুটি মেট্রোপলিটন থানার জন্য ১টি পাসপোর্ট অফিস হতে হবে। জনবল আরো বাড়াতে হবে। আর পাসপোর্ট অফিসের ভবন হতে হবে সার্ভিস ওরিয়েন্টেড। চারদিকে কাউন্টার থাকবে মানুষ মাঝে বসে থাকবে এবং স্ক্রিনে স্ক্রল দেখে তার সিরিয়াল অনুযায়ী সে সেবা নেবে। তবে এ সিস্টেম আমাদের আছে, কিন্তু ৫০০ লোকের জন্য। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড আইকাও অনুযায়ী, একজন বায়োমেট্রিক নেয়া কর্মকর্তা দিনে ২৫-৩০ জনের আবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া আছে। কিন্তু সেখানে তাকে তিনগুণ বেশি কাজ করতে হয়। দিনে কমপক্ষে ১০০-১৫০ আবেদন দাখিল করতে হয়।

তিনি বলেন, পাসপোর্ট হচ্ছে এক ধরনের ইন্টারনেশনাল ডকুমেন্ট। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করে ইন্টারনেশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও)। এইটা ইউনাইটেড নেশনের (ইউএন) একটা অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এরাই মূলত ঠিক করে দেয় সারা বিশ্বে পাসপোর্টের ক্যাটাগরি কী হবে, কী প্রক্রিয়ায় দেবে, এটার ডাটা কীভাবে থাকবে। এমনকি পাসপোর্টের অপারেটিং সিস্টেম কী হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম এত উন্নতমানের পাসপোর্ট দিয়েছে। পাসপোর্টে ২০১৮ সালে যে কালার চিপস, তা বিশ্বে বাংলাদেশই প্রথম দিয়েছে। আমাদের পরে আমেরিকা দেয়া শুরু করেছে। আমাদের এখানে দৈনিক পাসপোর্ট ডেলিভারির সক্ষমতা হচ্ছে ৫০০ জনের। কিন্তু সে জায়গায় আমরা প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার পাসপোর্ট ডেলিভারি দিতে হয়। অফিস যদি ৩টায় বন্ধ হয়ে যায় তারপরও আমাদের কর্মকর্তাদের কাজ করে যেতে হয়।

পাসপোর্ট ডেলিভারিতে দেরি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সুপার এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রে নিয়ম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি দেয়া। সব ধরনের পাসপোর্ট বিশেষ করে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির ক্ষেত্রেও আগারগাঁও অফিসকেই বেছে নেয়া হয়। তাই ডেলিভারির ক্ষেত্রে আমাদের যে পরিমাণ জায়গার দরকার তা আমাদের নেই। অনেকে আছে তাকে যেই শিডিউল টাইম দেয়া হয় তার আগেই চলে এসে ভিড় করে। ডেলিভারির যখন শিডিউল দেয়া হয় তার ২ ঘণ্টা আগে পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়। টোকেনে সময় উল্লেখ করা আছে। এর আগে নেয়া সম্ভব না। অযথা ভিড় করে লাভ নেই কোনো। এর ফলে ডেলিভারিতে কিছুটা বিলম্বিত হয়। ডেলিভাড়ির জন্য কাউকে আর পাসপোর্ট অফিসে আসতে হবে না। গ্রাহককে পাসপোর্ট তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে। আমরা এ পরিকল্পনাই করছি। গ্রাহককে শুধু একবারই আসতে হবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট আর ছবি তোলার জন্য। সবাই শুধু বলে আমি পাসপোর্ট পায়নি, দেরি হচ্ছে বা ঘোরাচ্ছে। আপনি যদি তাকে জিজ্ঞাস করেন কেন পাসপোর্ট পাননি, সে তখন বলবে আমার নামে ভুল ছিল। অথবা ঠিকানায় বা অন্য কিছু ভুল ছিল।

সেবার মান বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুই থানা মিলিয়ে একটি পাসপোর্ট অফিস থাকতে হবে। লোকবল বৃদ্ধি করতে হবে। ঢাকার বাইরে থেকে যারা এসেছে সেখানে স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। ডিজিটাল অর্থাৎ কিউ সিস্টেমে গ্রাহকসেবার মান আরো বাড়াতে হবে। আর মানুষকে সচেতন হতে হবে, তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক থাকতে হবে। তাহলে সেবার মানোন্নয়ন হবে।

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version