চট্টগ্রামের ইপিজেডে অপহরণের পর খুন হওয়া ৫ বছর বয়সী শিশুকন্যা আয়াতের ২ পা উদ্ধারের পর এবার মিলেছে মাথার খণ্ডিত অংশ।
বৃহস্পতিবার সকালে নগরের আকমল আলী ঘাটের স্লুইসগেট এলাকা থেকে মাথাটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে, বুধবার দুপুরে একই এলাকা থেকে আয়াতের খণ্ডিত ২ পা উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা ভোরের আকাশকে বলেন, প্রতিদিনের মতো আজ সেখানে অভিযান চালানো হয়। গতকাল আয়াতের খণ্ডিত ২ পা পাওয়ার পর আজ স্লুইচগেটে আটকে থাকা পানির মধ্যে জমা পলিথিনে তল্লাশি করে বিচ্ছিন্ন মাথাটি পাওয়া গেছে। আবির আলী যেভাবে বর্ণনা দিয়েছিলেন সেভাবেই কচটেপ মোড়ানো পলিথিনের ভেতরে মাথাটি পাওয়া যায়।’
এর আগে, গত ২৮ নভেম্বর রাতে শিশুকন্যা আয়াতকে অপহরণের পর খুন করে মরদেহ ছয় টুকরো করে খালে-সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার রহস্য উদঘাটনে অভিযুক্ত আবির আলীর পিতা-মাতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তারের পর তাদের আদালতের মাধ্যমে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়। মূলত অপহরণ ও খুনের পর মরদেহ ৬ টুকরো করার কারণ বের করতেই পিতা-মাতাকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানায় পিবিআই।
গত ২৪ নভেম্বর রাতে সিপিজেডের আকমল আলী রোডের পকেট গেট এলাকার বাসা থেকে আয়াতদের ভাড়াটিয়া আবির আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন থেকে চলা অভিযানে আয়াতের রক্তামাখা কাপড় ও সেন্ডেল উদ্ধার করা হয়।
গত ২৫ নভেম্বর নিখোঁজের ১০ দিনের মাথায় আবির আলী নামের এক যুবককে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সেই নিখোঁজ রহস্য উদঘাটন করে পিবিআই। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার আবির আলী স্বীকারও করেন- মুক্তিপণ দাবির জন্যই আবির আলী তার বাড়িওয়ালার নাতনিকে অপহরণ করে। মেয়েটি চিৎকার করায় তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং পরে লাশ গুম করতে আয়াতকে করা হয় ছয় টুকরো। আয়াতের খণ্ডিত মাংসপিণ্ডগুলোও ভাসিয়ে দেওয়া হয় সাগরে। তবে আসামি গ্রেপ্তারের পর খুনের ঘটনায় জড়িত এবং সব দায় স্বীকার করে। নিখোঁজের পর দিন ইপিজেড থানায় দায়ের হওয়া জিডি এখন মামলা হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
গত ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার বন্দরটিলার এলাকার নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত। এর পরদিন শিশুর বাবা সোহেল রানা এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করলেও কোন হদিস মিলেনি। নিখোঁজের দশ দিনের মাথায় গত শুক্রবার আবির আলী নামের এক যুবককে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এ নিখোঁজ রহস্য উদঘাটন করে পিবিআই।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়, আবির আলী মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে ঘটনার দিন বিকেলে আয়াতকে অপহরণ করে। পরে আয়াত চিৎকার করলে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে বাজারের ব্যাগে ভরে আকমল আলী সড়কের বাসায় নিয়ে ৬ টুকরো করে। তারপর কাট্টলীর সাগর পাড়ে ফেলে দেয়। গ্রেপ্তারের পর আবির আলী সব কিছু স্বীকার করে নেয়। মরদেহ টুকরো করার কাজে ব্যবহার করা বটি ও অ্যান্টি কাটার উদ্ধার করা হয়েছে আবির আলীর বাসা থেকে।
ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা ও সাহিদা আক্তার তামান্না দম্পতির মেয়ে আয়াত। ৩ তলা ভবনের মালিক সোহেলের ওই এলাকায় একটি মুদির দোকান আছে। আয়াত স্থানীয় তালীমূল কোরআন নূরানী মাদরাসার হেফজখানার ছাত্রী ছিল।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য