-->
শিরোনাম
জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৫ সদস্য গ্রেফতার

পাহাড়ে প্রশিক্ষণে থাকা জঙ্গিদের রসদ যেত ঢাকা থেকেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
পাহাড়ে প্রশিক্ষণে থাকা জঙ্গিদের রসদ যেত ঢাকা থেকেই

রাজধানী ঢাকা থেকেই রসদ যেত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র পাহাড়ে অবস্থান করা সদস্যদের কাছে। ছদ্মবেশে আত্মগোপনে থেকে এবং সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত। র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হওয়া ৫ জঙ্গি এ কাজে জড়িত ছিলো।

 

সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতার কৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য ও র‌্যাবের নিজস্ব গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে এসব কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

 

তিনি বলেন, গত রোববার (৪ ডিসেম্বর) রাতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর অভিযানে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ও রাজধানীর গুলিস্তান এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৫ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

 

গ্রেফতারকৃতরা জঙ্গিরা হলো- গোলাম সারোয়ার (২৫), সাকিব মাহমুদ (২৭), দুই সহোদর মো. ফরহাদ হোসেন (২২), মো. মুরাদ হোসেন (২১) এবং মো. ওয়াসিকুর রহমান ওরফে নাঈম (২৮)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী বই ও লিফলেট, ১টি রেজিস্ট্রার বই এবং ১টি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।

 

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার জঙ্গিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দাওয়াতি, হিজরতকৃত সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও তত্ত¡াবধান, পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় রসদ সামগ্রী সরবরাহসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলো।

 

তারা ২/৪ বছর আগেই নিকটাত্মীয়, বন্ধু ও স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মাধ্যমে তাত্তি¡ক, শারীরিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

 

তিনি বলেন, গ্রেফতার গোলাম সারোয়ার স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল সম্পন্ন করে। সে ল²ীপুরের রামগঞ্জে একটি মিষ্টির দোকানে চাকরি করতো। সে আগে গ্রেফতার হওয়া নেয়ামত উল্লাহর মেয়ের স্বামী। গোলাম সারোয়ার শশুরের মাধ্যমে ২ বছর আগে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়।

 

তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া তরুণদের কুমিল্লার বিভিন্ন সেইফ হাউজে রাখা ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে পাঠানো সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সঙ্গে সে জড়িত।

 

বিভিন্ন সেইফ হাউজে অবস্থান করা হিজরতকারীদের শারীরিক ও তাত্তিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতো গোলাম সারোয়ার। এ ছাড়াও তথাকথিত হিজরত করা সদস্যদের সেইফ হাউজে পৌঁছে দিতো বলে জানা যায়। সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত সে।

 

র‌্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, বিগত সময়ে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ ৩ তরুণের (নেহাল, আসমানী ও নিলয়) ঘটনায় কুমিল্লার দৌলতগঞ্জ রেলস্টেশনের নিকটবর্তী সিসিটিভি ফুটেজে গ্রেফতার সারওয়ারকে নিখোঁজদের কুমিল্লার দিকে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

 

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার হওয়া সাকিব মাহমুদ গাইবান্ধা থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করে। সে একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিংয়ের কাজ করতো। সে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সুরা সদস্য, উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের তত্ত¡াবধায়ক শামীম মাহফুজের আপন ভাতিজা।

 

৩ বছর আগে শামীম মাহফুজের মাধ্যমে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া সংগঠনে যোগদান করে। সাকিব মাহমুদ গাইবান্ধা অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত ছিলো। এ ছাড়াও শামীম মাহফুজের নির্দেশনায় গাইবান্ধা অঞ্চলে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে উদ্বুদ্ধ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে পাঠানোর কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত।

 

সে সংগঠনের একজন সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য। গাইবান্ধায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করায় সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরো ৩-৪ জন সদস্যকে একত্রিত করে সে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্বেই সাকিব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালে গাইবান্ধা সদর থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

 

র‌্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, গ্রেফতার ফরহাদ হোসেন ও মুরাদ হোসেন সহোদর ভাই। ফরহাদ স্থানীয় কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে এবং মুরাদ মাধ্যমিক পর্যন্ত। তারা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া সংগঠনের সূরা সদস্য এবং অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিবের শ্যালক।

 

৩ বছর আগে মোশারফ হোসেনের মাধ্যমে তারা ওই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়। তারা রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে ‘ট্রাস্ট টেলিকম’ নামে একটি মোবাইল এক্সেসসরিজের দোকান পরিচালনা করতো এবং দোকানের লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যয় করতো। এ ছাড়াও মুন্সিগঞ্জে তারা একটি গরু-ছাগলের খামার পরিচালনা করে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময়ে তাদের খামারে গিয়ে মিটিং করতো বলে জানা যায়।

 

গ্রেফতার হওয়া ওয়াসিকুর রহমান ওরফে নাঈম রাজধানীর একটি মাদ্রাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করে। দুই বছর আগে সে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। সে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে ‘ষোল আনা’ নামক একটি আতরের দোকান পরিচালনা করতো এবং দোকানের লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যয় করতো।

 

সে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল। গ্রেফতার হওয়া ফরহাদ ও মুরাদ পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, বস্ত্র সামগ্রী ও বোমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে তা নাঈমের ‘ষোল আনা’ নামক আতরের দোকানে পৌঁছে দিলে সে বিভিন্ন মাধ্যমে তা পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতো।

 

র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, পার্বত্য এলাকায় প্রশিক্ষনে অংশ নিতে যাওয়া ৫৫ জনের মধ্যে ৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। পাশাপাশি এর বাইরে ছদ্মাবেশে সংগঠনকে নানাভাবে সহায়তা ও জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৩ জন গ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাবের জঙ্গি বিরোধী বিশেষ সেলের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানায় র‌্যাবের কর্মকর্তারা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version