-->
শিরোনাম

৫০০ সোর্সের নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর মাদক সিন্ডিকেট

ইমরান খান
৫০০ সোর্সের নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর মাদক সিন্ডিকেট

ইমরান খান: রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয়ে মাদকের সিন্ডিকেট চালাচ্ছে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি। এরা মূলত সোর্স হিসেবে এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে মাদকের কারবার করে দিন দিন ফুলেফেঁপে উঠছে। এর বাইরেও কথিত এসব সোর্স হত্যাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। গুলশান, বনানী, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, লালবাগ, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, পল্লবী, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, হাজারীবাগ, খিলগাঁও, সবুজবাগ, দক্ষিণখান, বাড্ডা ও বনানীসহ বিভিন্ন এলাকার সোর্সরা সরাসরি মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বনানী-গুলশান এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন সোর্স শহীদ। আর তার মাদকের স্পটগুলো দেখাশোনা করেন হৃদয়, জাকির, নাডা সুমন, হারুন, ফটিক, স্বপন, মহরম ও মাইনুদ্দিন। এরা সবাই মাদক সেবক ও বিক্রেতা। সন্ধ্যার পর এদের তৎপরতা বাড়ে গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকায়।

 

রাতে গ্রাহকরা ভিড় করে সোর্স শহীদের মহাখালীর আমতলির বাসায়। এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের ওপর নেমে আসে করুণ নির্যাতন। ওই এলাকার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরও মাদক ব্যবসায় ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে সোর্স শহীদের বিরুদ্ধে। পুলিশের সঙ্গে সখ্য থাকায় তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করে না কেউ।

 

পল্লবীর মাদকের অন্যতম হোতা রাসেল। ২০১৪ সালের আলোচিত পল্লবী থানার পুলিশ হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এই রাসেল। শুধু পল্লবী নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদক সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত বছরের ৬ মার্চ তাকে ৭৫ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে লালবাগ থানা পুলিশ। পরে তাকে জনি হত্যা মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

 

কিন্তু মাত্র ছয় মাসের মাথায় উভয় মামলা থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে যায় সে। এলাকায় ফিরে আবারো মাদক বাণিজ্য শুরু করে রাসেল। পুলিশের সোর্স পরিচয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে সে। জনি হত্যা মামলায় জামিনে মুক্ত হওয়ার পর আতঙ্কে রয়েছেন নিহত জনির ছোট ভাই ও হত্যা মামলার বাদী ইমতিয়াজ হোসেন রকি। তিনি বলেন, রাসেল পুলিশ ও র‌্যাবের সোর্স হিসেবে পরিচিত। এছাড়া মাদক ব্যবসা করে সে অনেক টাকা বানিয়েছে। অর্থ ও প্রভাব খাটিয়ে সে যেকোনো সময় আমার ক্ষতি করতে পারে।

 

পল্লবীর মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বর সেকশনের মাদক ব্যবসায়ী রুবেল। সে এলাকায় ল্যাংড়া রুবেল ও একটি বাহিনীর সোর্স হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, তার মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়ার কারণে এডিসি ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মাদ আলি নামের এক যুবককে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার হতে হয়েছিল।

 

ভুক্তভোগী মোহাম্মাদ আলি জানান, তার বাসার সামনে মাদক বিক্রি করত রুবেল। বাধা দেয়ায় তাকে সরাসরি হুমকি দেয়। মোহাম্মাদ আলি বলেন, ‘২০২০ সালের ১৫ জুলাই এলাকার একটি চায়ের দোকান থেকে র‌্যাব আমাকে আটক করে নিয়ে যায়। ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী জামিন পাই। সম্প্রতি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযানে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয় রুবেলকে। বর্তমানে সে কারাগারে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে পাঁচ শতাধিক সোর্স বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। যাদের অনেকের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ড, চাঁদাবাজি, হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীজুড়ে কথিত সোর্সদের মাদকের শতাধিক স্পট রয়েছে। এতে কতিপয় পুলিশ সদস্যের আশ্রয়-প্রশয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। পুলিশের গাড়িতে চলাফেরার কারণে সোর্সদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ভয়ে মুখ খোলে না। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, দাগি সোর্সদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ আসছে। এর ভিত্তিতে তাদের পরিচয়সহ একটি তালিকা করে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সব মহানগর পুলিশের কমিশনার ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

 

ডিএমপির বিভিন্ন থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বনানী ও মহাখালী এলাকায় মাদক ব্যবসায় সক্রিয় রয়েছে পাগলা শরীফ ও মানিক, মহাখালি ওয়্যারলেস গেট এলাকায় সোর্স কাশেম. মতিঝিলের সবুজবাগ এলাকায় সোর্স মিন্টু, সেলিম, আজাদ, সুমন, সজীব, পল্টনে মরিয়ম, আজমল, শাহাবউদ্দিন, খলিল, শাহজাহানপুরে সোনিয়া, জলিল, হালিম, বাবলা, হানিফ ও পল্লবীতে বাবলা ও ল্যাংড়া রুবেলসহ প্রায় শতাধিক সোর্সের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা পরিচালনা ও মাদক কারবারিদের সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) একেএম হাফিজ আক্তার ভোরের আকাশকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে ডিএমপির প্রতিটি থানা এলাকায় আমাদের নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। আগে অনেকটা প্রকাশ্যে মাদকের বেচাকেনা হতো। এখন কিন্তু সেটা নেই। শিগগিরই মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হবে। এসব বাণিজ্যে যে বা যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি

মন্তব্য

Beta version