-->
শীর্ষ দুই জঙ্গি নেতা অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

আরসায় মিশছে ‘শারক্বিয়া’: উদ্দেশ্য বড় নাশকতা

র‌্যাবের অভিযানে এ সংগঠনের গ্রেপ্তার ৩৮

ইমরান আলী ও শাহীন আলম
আরসায় মিশছে ‘শারক্বিয়া’: উদ্দেশ্য বড় নাশকতা

ইমরান আলী ও শাহীন আলম: বান্দরবানের গহিন অরণ্যে যৌথ বাহিনীর তাড়া খেয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জঙ্গিরা। কেএনএফের সঙ্গে অনেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও পাহাড় ছেড়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয়। আর সেখানে আস্তানা গড়ে যোগাযোগ রক্ষা করে অস্ত্র ও বোমা সংগ্রহের দিকে মনোযোগী হচ্ছে। সম্প্রতি ক্যাম্পগুলোয় আরেক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরসার সঙ্গেও অনেকে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এদের সবার উদ্দেশ্য বড় ধরনের নাশকতা চালানো। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা এমন আশঙ্কাতে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন দিলে নজরদারি বাড়ায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব। র‌্যাবের গোয়েন্দা জালে ধরা পড়ে শীর্ষ দুই জঙ্গি।

 

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’র শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রণবীর এবং তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ আবুল বাশারকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। নব্য এ জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষনেতাকে গ্রেপ্তারে রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালায় র‌্যাব। পরে সকালে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গোলা-বারুদসহ কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাবের একটি দল।

 

জানা গেছে, র‌্যাব কর্তৃক প্রকাশিত পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত ৫৫ জনের তালিকায় নাম ছিল গ্রেপ্তার আবুল বাশারের। গত বছরের ৩ অক্টোবর র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে আবুল বাশার ৫৫ জনের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড় থেকে পালিয়ে সিলেট চলে যান এবং সামরিক শাখার প্রধান রণবীরের কাছে আশ্রয় নেন। পরে তারা দুজন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মগোপন করেন।

 

সোমবার সকালে কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত বছরের আগস্টে আট তরুণ কথিত হিজরতের নামে ঘর ছাড়ে। তাদের খুঁজতে গিয়ে র‌্যাব ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের তথ্য পায়।

 

এরপর সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে আজ পর্যন্ত তিন বিচ্ছিন্নতাবাদীসহ নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের ৩৮ জনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ, রিক্রুটমেন্ট নিয়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা গত বছরের ২০ অক্টোবর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-৭-এর বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সমতল থেকে পাহাড়ে আত্মগোপনে থাকা ৭ জঙ্গি এবং তাদের সহায়তাকারী ৩ জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

এরপর দিন ২১ অক্টোবর গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে বিলাইছড়ি থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা করা হয়। গ্রেপ্তার সাত আসামির মধ্যে নব্য জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার উপপ্রধান সৈয়দ মারুফ আহমেদ মানিক ছিলেন। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিলাইছড়ি থানায় রুজুকৃত মামলার তদন্তকারী অফিসার বিজ্ঞ আদালতে ৫ আসামির রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত সংগঠনটির সামরিক শাখার উপপ্রধান সৈয়দ মারুফ আহমেদ ওরফে মানিকসহ ৫ আসামির ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

 

সৈয়দ মারুফ আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদে সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রণবীর ওরফে মাসুদের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে, জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রণবীর ওরফে মাসুদ এবং আইইডি বা বোমা বিশেষজ্ঞ মো. আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলম কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।

 

ওই তথ্যের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৭ এর এ- ব্লকে ভোর ৫টা হতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-২, র‌্যাব-৩ এবং র‌্যাব-১৫ এর যৌথ চিরুনি অভিযান শুরু করে। ব্লকটি ঘেরাওয়ের সময় সামরিক শাখার প্রধান রণবীর এবং বোমা বিশেষজ্ঞ বাশার পালানোর চেষ্টা করলে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়। উদ্ধার করা হয়, একটি বিদেশি পিস্তল, ৩টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ১০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, একটি ব্লাংক কার্টিজ, দুটি একনলা বন্দুক, ১১টি ১২ বোরের কার্তুজ, একটি খালি খোকা, ১০০ রাউন্ড, ২২ বোরের গুলি, একটি মোবাইল ফোন ও নগদ ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৬০ টাকা।

 

কমান্ডার মঈন বলেন, তথাকথিত হিজরতের নামে ঘর ছাড়া ও পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে প্রশিক্ষণরত ৫৫ জনের তালিকা প্রকাশ করেছিল র‌্যাব। সেই তালিকায় নাম ছিল গ্রেপ্তার আবুল বাশারের। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ আবুল বাশার জানায়, গত ৩ অক্টোবর র‌্যাব এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান শুরু হওয়ার পর তিনি ৫৫ জনের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড় থেকে পালিয়ে সিলেট যায় এবং সামরিক শাখার প্রধান রণবীরের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেন।

 

তারা দুজন কয়েক দিন আগে নিরাপদ মনে করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মগোপন করেছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, আমরা মাত্র তাদের গ্রেপ্তার করেছি। তাদের বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা, অর্থসহ অস্ত্রের জোগানদাতা, টেকনাফ ও বান্দরবানসহ পাহাড়ে ছিনতাই-অপহরণে তাদের যোগাযোগ রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।

 

এদিকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, পাহাড়ে কেএনএফের সঙ্গে প্রশিক্ষণরত কিছু জঙ্গি সদস্য অভিযানের কারণে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে সেখানে আস্তানা গড়তে নানা ধরনের চেষ্টা চালাতে থাকে। এমনকি পলাতক আরো কিছু জঙ্গির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। কর্মকর্তারা বলেন, নাশকতা চালাতে তারা সেখানে অস্ত্র, গোলাবারুদ সংগ্রহের দিকে মনোযোগী ছিল।

 

বিচ্ছিন্নতাবাদী আরেক সংগঠন আরসার সঙ্গে মিলে তারাও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এসব জঙ্গিরা পাহাড়ে কেএনফের সঙ্গে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। র‌্যাবের এ অভিযানের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পে আস্তানা গড়ার যে চেষ্টা সেটি কিছু হলো নস্যাৎ হয়ে গেছে বলেও মনে করেন জঙ্গি বিষয়ে খোঁজখবর রাখা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version