-->
শিরোনাম

নারী মাফিয়াদের ভয়ংকর মাদক সিন্ডিকেট

ইমরান খান
নারী মাফিয়াদের ভয়ংকর মাদক সিন্ডিকেট

ইমরান খান: রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে নারী মাফিয়াদের ভয়ংকর মাদক সিন্ডিকেট। এসব নারীদের মাদকের স্পটে ইয়াবা, গাঁজা ও হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বেচাকেনা হয়। এদের অনেকে মাঝে-মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলেও বেশিরভাগ মাদক সম্রাজ্ঞীরাই থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কোনো কোনো এলাকায় এসব নারী মাফিয়াদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাতে গিয়ে একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছে পুলিশ সদস্যরা।

 

এমনকি সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মাদক কারবারিদের হামলা থেকে রেহাই পান না সাংবাদিকরাও। অভিযোগ রয়েছে, এসব মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলে উল্টো পুলিশের বিরুদ্ধে আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করে তারা। যদিও অভিযোগ রয়েছে, এক শ্রেণির অসৎ পুলিশ সদস্যরা কমিশনের বিনিময়ে মাদক কারবারিদের সহযোগিতা করেন।

 

রাজধানীর কাওরানবাজার রেললাইন এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে গতকাল দুপুরে হামলার শিকার হন এস এ টিভির রিপোর্টার তাইফুর রহমান তুহিন। মালিবাগে রেললাইন ও ফ্লাইওভারের পাশে হাতে কিছু একটা নিয়ে ছুটোছুটি করছে এক পথশিশু। পাশে যেতেই ওই শিশু বলছিল, গাঁজা আছে লাগবে? তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সারাদিন হকারি করে গাঁজা বিক্রি করে সে। আর রাতে গাঁজা বিক্রির টাকা বুঝিয়ে দেয় ময়না নামের এক নারীকে। সে জানায় ওই নারীও মালিবাগ ফ্লাইওভারের নিচে তাদের সঙ্গে থাকে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পথশিশুদের দিয়ে মাদক বিক্রি করান ময়না নামের ওই মাদক সম্রাজ্ঞী। ময়না নিজেও ছিন্নমূল। যে কারণে পুলিশের নজর এড়িয়ে যায় সহজেই। প্রথমে পথশিশুদের নিজের সঙ্গে রেখে মাদকাসক্ত করায় ময়না। পরে ওইসব পথশিশুদের দিয়ে গাঁজা ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি করায়। এ ছাড়া রামপুরার বাসিন্দা ‘বুড়ি’ নামের এক নারীর হয়ে মধুবাগ, নয়াটলা ও মগবাজার এলাকায় মাঠ পর্যায়ে মাদক বিক্রি করে বিভিন্ন বয়সের কয়েক’শ খুচরা বিক্রেতা।

 

এদিকে রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের জেনেভো ক্যাম্পে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাদক কারবারিরা। জেনেভা ক্যাম্পের জয়নাল আবেদীন ওরফে পাঁচু ও তার স্ত্রী ‘ইয়াবা সুন্দরী’ খ্যাত ফারহানা আক্তার পাপিয়াকেও গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি জামিনে বের হয়ে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে এক যুবককে বিয়ে করে পাপিয়া। পরবর্তীতে স্বামীসহ ভারতে চলে গেছে ইয়াবা সুন্দরী পাপিয়া।

 

জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মোটকি সিমা নামের এক নারীর শেল্টারেই মাদক বাণিজ্য চালাচ্ছে। জেনেভা ক্যাম্পের সাত নম্বর সেক্টরের আলফালাহ ক্লিনিকের সামনে গাঁজা ও হেরোইনের স্পট চালায় সিমা নিজে। এ ছাড়া হেরোইন ব্যবসায় জয়া, টানো ও মনিরের মা জহরিও সক্রিয়। পল্লবীর বাউনিয়া বাঁধের টেম্পু স্ট্যান্ড এলাকায় ইয়াবা ও হেরোইনের স্পটটি নিয়ন্ত্রণ করে ফাতেমা। মাদক কারবারি, মাদকসেবি ও পুলিশের কাছে সে ফতেহ নামে পরিচিত।

 

চার মাস আগে মাদকের বড় একটি চালান ধরতে ফাতেমার স্পটে অভিযান পরিচালনা করে পল্লবী থানা পুলিশ। এ সময় স্থানীয় কিছু হিজড়া ও মাদক সম্রাজ্ঞী ফতেহর লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় আহত হন পল্লবী থানার এএসআই শফিকুল ও কন্সটেবল আলামিন। পরে ৭০০ পিস ইয়াবা ও এক কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করা হয় মাদক সম্রাজ্ঞী ফাতেমা ওরফে ফতেহকে।

 

ওই অভিযানের নেতৃত্বে থাকা পল্লবী থানার উপপরিদর্শক চিন্ময় সরকার এ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে গতকাল ভোরের আকাশকে বলেন, ফাতেমার স্পটে ইয়াবার বড় চালান কেনাবেচা হচ্ছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়েছিলাম। এ সময় স্থানীয় হিজড়া ও নারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সবকিছু উপেক্ষা করেও আমরা ফাতেমাকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করি।

 

মিরপুর ১১ নম্বরের মিল্লাত ক্যাম্পে রয়েছে অনেকগুলো মাদকের স্পট। এই ক্যাম্পের একটি মাদকের স্পট নিয়ন্ত্রণ করে সায়মা ও তার বোন শাম্মি। এই স্পটে শুধু হেরোইন ও ইয়াবা বিক্রি হয়। মাঠ পর্যায়ে তাদের অর্ধশত খুচরা বিক্রেতা রয়েছে। গত বছরের ২৩ জুলাই ১২৭ গ্রাম হেরোইনসহ সায়মাকে গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানা পুলিশ। অল্পকিছুদিনের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে আসে সায়মা। বর্তমানে সায়মা তার বোন শাম্মি কৌশল বদলে ওয়াটস অ্যাপ ও ফোনের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা করছে।

 

এসব বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এ কে এম হাফিজ আক্তার ভোরের আকাশকে বলেন, অনেক নারীরা পাকস্থলিতে করে মাদক বহন করে। এরকম অনেককেই আটক করা হয়েছে। মাদক সম্রাজ্ঞীদের গ্রেপ্তারেও একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি।

 

পুলিশের কর্মকর্তা বলেন, একজন মাদক কারবারিকে ১৮ থেকে ২০ বার গ্রেপ্তারের পর যখন জামিনে মুক্ত হয়ে তারা আবারো একই কাজ শুরু করে তখন মাদক নির্মূল করা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তবে দ্রæত বিচার নিশ্চিত হলে অপরাধ কমবে বলে মনে করেন তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version