-->
পুলিশের বিশেষ অভিযান, পাড়া-মহল্লায় ব্লকরেইড

মাদক কারবারি, চোর ও ছিনতাইকারী গ্রেপ্তারে কঠোর নির্দেশনা

ইমরান আলী
মাদক কারবারি, চোর ও ছিনতাইকারী গ্রেপ্তারে কঠোর নির্দেশনা

ইমরান আলী: রাজধানীজুড়ে শুরু হয়েছে পুলিশের বিশেষ অভিযান। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৮ ক্রাইম বিভাগের ৫০ থানা এবং গোয়েন্দা পুলিশ এ অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানের প্রথম দিনেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৬ জনকে। গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশই মাদক ব্যবসায়ী। আর এ অভিযান চলবে এক সপ্তাহ।

 

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও থানার অফিসার ইনচার্জদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশেষ অভিযান পরিচালনা পুলিশের একটি রুটিনওয়ার্ক। তবে চলমান অভিযানে মাদক, চোর এবং ছিনতাইকারী গ্রেপ্তারে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীজুড়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা আসে মঙ্গলবার। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের নির্দেশে প্রত্যেকটি ক্রাইম ডিভিশনের উপকমিশনার এবং গোয়েন্দা পুলিশকে এ সংক্রান্ত আদেশ পৌঁছে দেয়া হয়। প্রতিটি ক্রাইম ডিভিশনের উপকমিশনাররা অধীনস্থ থানার প্রত্যেক অফিসার ইনচার্জকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য লিখিত নির্দেশ দেন।

 

একইভাবে গোয়েন্দা বিভাগের প্রতিটি টিমকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এবারের নির্দেশনা সুনির্দিষ্টভাবে মাদক, চুরি এবং ছিনতাইকারী গ্রেপ্তারে বিশেষ জোর দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

 

জানা যায়, গত ডিসেম্বর মাসে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ রাজনৈতিক নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকার কারণে সুযোগসন্ধানী মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অপরাধীরা নানাভাবে সুযোগ নিয়েছে। প্রায় এক মাস পর রাজনৈতিক ওই রকম কর্মসূচি না থাকায় পুলিশ সপ্তাহজুড়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। আর সেই আলোকে শুরু হয়েছে এ অভিযান। মঙ্গলবার রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় ব্লকরেইড দিয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়।

 

সূত্রমতে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একশ্রেণির মাদক ব্যবসায়ী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি বাসাবাড়িতে গ্রিল কেটে চোরের উৎপাতও বেড়েছে। সেইসঙ্গে ছিনতাইকারী আতঙ্ক তো রয়েছেই। এসব বিবেচনায় নিয়ে ক্রাইম বিভাগের প্রতিটি থানাকে সতর্ক থেকে তাদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

 

ডিএমপি সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ পরিচালিত এ অভিযানে মোট ৭৬ জনকে আটক করা হয়েছে। একই সময়ে ১১ হাজার ৩০০ পিস ইয়াবা, ২৯ বোতল ফেনসিডিল, প্রায় ২০ কেজি গাঁজা এবং হেরোইন জব্দ করে। গত দুদিনে গ্রেপ্তার করা হয় ৭৭ জনকে।

 

ডিএমপির কামরাঙ্গীচর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে পরিচালিত অভিযানে সফলতাও পেয়েছি। ১ হাজার পিস ইয়াবাসহ সালমা বেগম নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছি।

 

তিনি বলেন, সালমা একজন মাদক ব্যবসায়ী। তাকে আমরা গ্রেপ্তারের জন্য এর আগেও কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি। অবশেষে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমাদের এলাকায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, বিশেষ তিনটি বিষয়কে চিহ্নিত করে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা সে মোতাবেক কাজও শুরু করেছি। রামপুরার বেশকিছু এলাকাকে নজরদারির আওতায় এনে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, টিভি রোডসহ আশপাশের এলাকায় কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। আমরা সেদিকটা নজরে রেখেই কার্যক্রম চালাচ্ছি।

 

শাহআলী থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা মঙ্গলবার রাত থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছি। সপ্তাহজুড়ে চলবে এ অভিযান। মাদক ব্যবসায়ী, চোর ও ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

 

পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান শুরু হয়েছে। দিনরাত মাঠের অফিসারদের এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

 

তেজগাঁও থানার ওসি অপূর্ব হাসান বলেন, নির্দেশনা মোতাবেক আমরা আমাদের কাজ শুরু করেছি। প্রতিদিনই মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। বিশেষ নির্দেশনাতে গ্রেপ্তার আরো বাড়বে।

 

সার্বিক বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বিশেষ অভিযান আমাদের রুটিনওয়ার্ক। মাঝেমধ্যে আমরা এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে থাকি। অপরাধীরা যেন সুযোগ না পায়, সে লক্ষ্যেই সতর্ক থাকার কৌশল হিসেবে আমরা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিই।

 

তিনি বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশেই মাদকের বিস্তার রয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রণের জন্য সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ কারণে অভিযানের প্রথমে মাদক উদ্ধারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। পাশাপাশি অন্যান্য যে অপরাধÑ চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এগুলো প্রতিরোধে প্যাট্রলিংয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রাতের আঁধারে নিরাপত্তার গাফিলতিতে যেন চুরি-ছিনতাই না হয়, তার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

 

তিনি আরো বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ বিশেষ অভিযানের স্থায়িত্ব হবে। বিশেষ অভিযানে এসব অপরাধীকে গ্রেপ্তারে প্রতিটি বিভাগের উপকমিশনার থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version