বিকাশের নামে অর্থ লুটে নিচ্ছে প্রতারক

ইমরান খান
বিকাশের নামে অর্থ লুটে নিচ্ছে প্রতারক

ইমরান খান: নিত্যনতুন ফন্দি বের করে বিকাশের গ্রাহকদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলছেন প্রতারকরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জাড়িত থাকে মোবাইল অপারেটর ও বিকাশের এজেন্ট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ দল এদের নানা সময় গ্রেপ্তার করছে। কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না তাদের তৎপরতা। পুলিশ বলছে, অল্প পরিমাণ অর্থ খোয়া যায় বলে অধিকাংশ সময় অভিযোগই দায়ের করছেন না ভুক্তভোগীরা। লিখিত অভিযোগ না থাকায় পার পেয়ে যাচ্ছে প্রতারক চক্রের সদস্যরা।

 

এমনই এক প্রতারক চক্রের মূলহোতা খোরশেদ আলম। সে বাংলালিংকের মার্কেট অপারেশন ডিস্ট্রিবিউটরের একজন এজেন্ট। বিভিন্ন বস্তি এলাকায় গিয়ে কৌশলে সাধারণ মানুষের আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করত সে। পরে সংগৃহীত হাতের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সিম ইস্যু ও তা বিক্রি করত বিকাশ এজেন্টের কাছে। এসব সিম থেকেই বিকাশ এজেন্ট ও কর্মকর্তা সেজে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিত এ চক্র।

 

গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা মাহতাফ হোসেন তার বিকাশ নম্বরে ১২ হাজার টাকা ক্যাশ ইন করেন। বাসায় ফেরার পর তাকে ফোন করে জানানো হয়, ক্যাশ ইন করার সময় ভুল নম্বরে টাকা চলে যাওয়ায় একটি নম্বর লক করে দেয়া হয়েছে। সেই লক খোলার জন্য ওটিপি মাহতাফের নম্বরে পাঠানো হয়েছে।

 

মাহতাফ সে নম্বর বলার পর দেখেন, তার বিকাশ থেকে ৪৭ হাজার ৯৪০ টাকা হাওয়া হয়ে গেছে। এরপর ওই নম্বরে কল করলে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। থানায় অভিযোগ করলে গতকাল রোববার ভোর সাড়ে ৪টায় খোরশেদ আলমকে ডেমরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ চক্রের আরো চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

এ বিষয়ে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মহসীন জানান, খোরশেদ বাংলালিংকের মার্কেট অপারেশন ডিস্ট্রিবিউটর হলেও সে সিম নিবন্ধনের কাজ করত। এর সুযোগ নিয়ে এবং তার প্রতারক চক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষের আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে নতুন সিম ইস্যু করে তা বাজারে বিক্রি করত। সময় ও সুযোগ বুঝে বিকাশের টাকা হাতিয়ে নিত। এ বিষয়ে একজন ভিক্টিমের অভিযোগের পর তদন্তে এসব তথ্য উঠে আসে।

 

খোরশেদকে গ্রেপ্তারের পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী খোরশেদ আলম (২৮), মো. ফয়সাল হাসান ফাহিম (২৪), আনোয়ার পারভেজ ভ‚ঁইয়া (২৫), মো. মমিনুল ইসলাম (২৯) এবং মো. নজরুল ইসলামকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়।

 

সম্প্রতি পল্লবীর সি ব্লকের শতাধিক মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে দেশে ছেড়ে পালিয়ে যায় সাব্বির নামের এক বিকাশ এজেন্ট। ভুক্তভোগী জুয়েল জানান, সাব্বির অনেক দিন ধরে এ এলাকায় বিকাশের এজেন্ট হয়ে কাজ করছিল। পাশাপাশি তার দোকানে ফটোকপি ও মোবাইল রিচার্জও করত।

 

এলাকায় দীর্ঘদিন থাকার কারণে মানুষ তাকে বিশ্বাস করত। তার দোকানে দাঁড়িয়েও অনেক গ্রাহক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কিন্তু সে সমস্যাটি সমাধান করার আশ্বাস দেয়ায় কেউ থানা পুলিশমুখো হননি। গত বছরের শেষের দিকে বিভিন্ন মানুষকে টার্গেট করে লাভ দেয়ার কথা বলে টাকা নেয় সাব্বির।

 

জুয়েল বলেন, আমার কাছ থেকেও ৫ লাখ টাকা নিয়েছে। এর কিছুদিন পরই সে দোকানও তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে জানতে পারি, সে কয়েকশ মানুষের কাছ থেকে এভাবেই প্রায় কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। মামলা করলে পুলিশ জানায়, সে দেশে নেই। শুধু খোরশেদ বা সাব্বির নয়, রাজধানীসহ সারা দেশে ওঁৎপেতে বসে আছে এমন অসংখ্য প্রতারক। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

 

থানায় মামলা দায়েরকে অনেকেই ঝামেলা মনে করেন। সাধারণত টাকার পরিমাণ কম হলে থানা পুলিশমুখো হন না তারা। অন্যদিকে থানায় লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না সহজে। ভুক্তভোগীদের একজন সোনিয়া জানান, তার বিকাশ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লুটে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এ বিষয়ে কয়েক মাস আগে হাতিরঝিল থানায় লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।

 

গ্রেপ্তার করা হয়নি চক্রের সদস্যদের। প্রতারক চক্রের সদস্যরা ঢাকার বাইরে বা দুর্গম এলাকায় অবস্থান করলেও তাদের গ্রেপ্তারে আগ্রহী হন না পুলিশ সদস্যরা, এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। যদিও পুলিশ কর্মকর্তারা এ অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন।

 

প্রতারকদের অনেকে মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে গ্রেপ্তার হলেও থামানো যাচ্ছে না তাদের অপকর্ম। বিকাশসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে প্রতারণা করছে এসব চক্র। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে মানুষের মোবাইল ওয়ালেট থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা।

 

পুলিশ বলছে, বেশিরভাগ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ না করার কারণে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে প্রতারকরা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য