রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মীরহাজীরবাগ এলাকায় শাওন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাব। একইসঙ্গে শাওন হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানী যাত্রাবাড়ীর মীরহাজীরবাগ এলাকায় শাওন নামক এক যুবকের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে পরের দিন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। যার মামলা নম্বর-৭৯। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব খুনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ছায়া তদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১০-এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মিজান ও তার সহযোগী ফুটবল জুয়েলকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় কিলিং মিশনে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র ও ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ভিকটিম শাওন দীর্ঘদিন ধরে পরিবারসহ রাজধানী যাত্রাবাড়ীর মীরহাজীরবাগ এলাকায় বসবাস করে আসছিল। তিনি টিকাটুলীতে একটি ট্রাভেলস কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ভিকটিম ও গ্রেপ্তাতরকৃত আসামিরা যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা। গত বছরের মাঝামাঝি সময় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভিকটিমের সঙ্গে মিজানের ভাই রজবের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে পুনরায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গত মাসে ভিকটিম শাওন ও রজবের মধ্যে ঝগড়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি রজব তার বড় ভাই গ্রেপ্তারকৃত মিজানকে জানায়। পরে তারা কিছুদিন পূর্বে মিজানের নেতৃত্বে শাওনকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে। এসময় তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। ঘটনার দিন রাতে ভিকটিম তার স্ত্রীর জন্য ওষুধ আনতে বাসা থেকে বাহিরে বের হয়। এসময় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মিজান মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি অবস্থান করে। আসামি রজব অতর্কিতভাবে ভিকটিমকে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। খুনের সময় গ্রেপ্তারকৃত জুয়েল রাস্তার মোড়ে পাহারার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল যেন হঠাৎ করে কোনো পথচারী ঘটনাস্থলের দিকে না আসে। ভিকটিম গুরুত্বর জখম হয়ে জীবন বাঁচাতে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করলে আসামিরা দৌঁড়ে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপুরি আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। ঘটনার পরপরই গ্রেপ্তারকৃত মিজান ও জুয়েল মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
র্যাব মুখপাত্র মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মিজান যাত্রাবাড়ী এলাকার একজন চিহ্নিত অপরাধী। তার নামে যাত্রাবাড়ী ও মীরহাজিরবাগ এলাকায় মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সময় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও মারামারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। রজবের সঙ্গে শাওনের মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভিকটিমকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য তার নেতৃত্বেই শাওনকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ঘটনার পর সে শ্যামপুর এলাকায় তার আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৫টি মামলা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, মূলত আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তার মিজানসহ তার সহযোগীরা মাদকসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত থাকলেও শাওনের তেমন কোন অপরাধের রেকর্ড নেই।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য