জাল দলিল তৈরি ও সরকারি জমি বিক্রি করার দায়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলরসহ তিনজনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। জাল কাগজপত্র তৈরি করে রংপুর শহরের মডার্ন মোড়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি দখল করে একটি চক্র। মাটি ভরাটের পর তা বিক্রির জন্য বায়না দলিল করে প্রায় ১২ লাখ টাকা আত্মসাত করে চক্রটি। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের দীর্ঘদিন পর রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এই রায় দেন।
গতকাল মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবী নিকুঞ্জ চন্দ্র বর্মন জানান, তদন্ত ও শুনানি শেষে মামলার সত্যতা পেয়ে আদালত আসামিদের প্রত্যেককে এক বছর করে কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছে, রংপুরের বিনোদপুরের মৃত এ কে এম আজিজুল ইসলামের ছেলে রংপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলু, গাইবান্ধার মৃত শফিকুল ইসলামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, নগরীর আলমনগর এলাকার ওমর আলীর ছেলে খায়রুল ইসলাম রাসেল। গত ২০ ফেব্রুয়ারি আদালত তাদের বিরুদ্ধে রায় দেন। রায়ে হযরত আলী, ও জহুরুল ইসলাম ভেসলাকে মামলা থেকে খালাস দেয়া হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, দণ্ডপপ্রাপ্ত আসামিরা এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাদের মধ্যে জাকারিয়া আলম শিপলু সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। তাদের প্রতারণার শিকার দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়ার গুড়গুড়ি এলাকার মৃত বাশারত উল্লাহ পাইকারের ছেলে নুর মোহাম্মদ। তিনি রংপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে একটি মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় পাঁচজনকে।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তারা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাত শতাংশ জমি জাল নামজারি, মাঠ পর্চা ও কাগজপত্র তৈরি করেন। ওই জমি বিক্রির জন্য ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাম ঠিক করে ১১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা বায়না দলিল করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। দীর্ঘ সাত মাস তদন্ত করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই।
তদন্ত প্রতিবেদনে পিবিআই উল্লেখ করেছে, আসামিরা প্রতারণা করার জন্যই জমির কাগজ জাল করে এগুলোর মাধ্যমে আনোয়ারুল ইসলাম শামীমের কাছ থেকে ১১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। এছাড়াও অপর আসামি দালাল জহুরুল ইসলাম ও হজরত আলী ক্রেতাকে মাঠ পর্চা ও কাগজপত্রাদি সঠিক আছে প্রমাণ দিয়ে জালিয়াতি চক্রকে ওই টাকা আত্মসাত করতে সহযোগিতা করায় তাদের বিরুদ্ধেও অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা এতে জড়িত ছিলো। অসাধু ওই কর্মকর্তা অর্থের বিনিময়ে জাল দলিল, নাম খারিজ, নামজারি, মাঠ পর্চা তৈরি করে দেন। সিন্ডিকেটটি ওই ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে তা বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
মামলার বাদি ও ক্রেতার বাবা নুর মোহাম্মদ জানান, জমি নিয়ে সিন্ডিকেটের প্রতারণার কথা জানার পর টাকা ফেরত চাইলে তারা হুমকি-ধমকি দেয়। এরপর আমি বাধ্য হয়ে মামলা করি। শিপলু ও তার চক্রের বিরুদ্ধে রংপুরের আশরাতপুর, কোতোয়ালি, গাইবান্ধার সাঘাটাসহ বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। জাল কাগজপত্র তৈরি করে জমি দখল, বিক্রি, আত্মসাতসহ নানা অভিযোগে এসব মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ভোরেরে আকাশ/আসা
মন্তব্য