রাজধানীতে গোপন বৈঠকের সময় আটক ৫৭

নাশকতার পরিকল্পনা জামায়াত-শিবিরের

ইমরান আলী
নাশকতার পরিকল্পনা জামায়াত-শিবিরের

ইমরান আলী: স্বাধীনতা দিবসে দেশব্যাপী নাশকতার পরিকল্পনার ছক আঁকছে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর আগে একাধিকবার এমন উদ্যোগ নিলেও আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া অবস্থানের কারণে তা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া জামায়াত আমির ও তার ছেলে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয়ার পরপর সহিংস হয়ে ওঠে দলের নেতাকর্মীরা।

 

সম্প্রতি খিলগাঁও এলাকায় মিছিল ও সমাবেশ করে তাদের আগের অবস্থান জানান দিয়েছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বিভিন্ন সময়ে গোপন বৈঠকে মিলিত হচ্ছে। মাঝেমধ্যে ধরাও পড়ছে। তবে সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর রয়েছে তাদের কার্যক্রমের ওপর।

 

জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষনেতাদের ফাঁসি কার্যকরের পর অনেকটা স্থিমিত হয়ে পড়ে দলীয় কার্যক্রম। নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘাপটি মেরে থাকাসহ দেশের বাইরেও চলে যান। এমন পরিস্থিতিতে জামায়াতের ছাত্র সংগঠনটি চাঙ্গা হওয়ার চেষ্টা করে। কাতার থেকে পরিচালিত অনলইনে সভা সেমিনার ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে আসছে।

 

প্রকাশ্যে না পেরে তারা অনলাইন প্ল্যাটফরম বেছে নেয়। দেশে পরিচালিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে রাখা হয় কাতারে পালিয়ে যাওয়া জামায়াত নেতাদের। সেখান থেকে শুধু দাওয়াতি কার্যক্রম নয় দেশের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখাতে সেখান থেকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এদিকে বনভোজন, চাকরি মেলা, নানা অনুষ্ঠানের আড়ালে সক্রিয়ভাবেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির।

 

আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এর সাফল্য ঘরে তোলার জন্য সমর্থক তৈরির কার্যক্রমও অব্যাহত রেখেছে। মাঠপর্যায়ের শিবিরের নেতাদের কাছে পাঠানো লিখিত পরিকল্পনায় আরো বলা হয়েছে, ‘জনে জনে দাওয়াত’ স্লোগান সামনে রেখে জনবল বৃদ্ধি করতে হবে। টার্গেট করতে হবে মেধাবী, চরিত্রবান, বুদ্ধিমান, কর্মঠ, নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন, সমাজে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাবশালী ছাত্রদের।

 

ওই নথি ঘেঁটে জানা যায়, চার ক্যাটাগরির ছাত্রকে শিবিরের টার্গেট। তা হলো সিঙ্গেল ডিজিট, জিপিএ-৫, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রথম সারির শিক্ষার্থী ও প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত টার্গেট করা ছাত্রদের সিঙ্গেল ডিজিট হিসেবে বিবেচনা করে সংগঠনটি। জিডিএ-৫, কওমি, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, মেডিকেল, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসা নতুন ছাত্রদেরও চায় তারা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে মেধা তালিকার প্রথম থেকে পঞ্চম স্থানে থাকা মেধাবী ও প্রভাবশালী ছাত্রদের বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়েছে।

 

শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়াতে ছদ্মনামে বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে শিবিরের। সময় ও সুযোগ অনুসারে ছাত্রদের নিয়ে এসব প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করে থাকে সংগঠনটি। যেমন বিজ্ঞান ও গণিত অলিম্পিয়াড, বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞান মেলা, ক্রিয়েটিভিটি সার্চ প্রোগ্রাম, ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম, চাকরি মেলা, অদম্য মেধাবী ও কৃতী সংবর্ধনা, শিক্ষা সফর, স্প্রিং ক্যাম্প, সামার ক্যাম্প, কুইজ প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পাঠ্যপুস্তকের ওপর মডেল টেস্ট, প্রি-অ্যাডমিশন মডেল টেস্ট, ভাষাশিক্ষা কোর্স, অনলাইন দাওয়াতি কার্যক্রম।

 

ডিএমপির দারুস সালাম জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মফিজুর রহমান পলাশ জানান, শনিবার রাতে মিরপুর ক্যাপিটাল টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে জামায়াতের ৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল রোববার এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।

 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন জামায়াতের গ্রেপ্তার ৫৭ জন ছাড়াও পালিয়ে যাওয়া আরো ৩০ থেকে ৪০ জন মিলে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এ বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। এর আগে গত ৪ মার্চ চট্টগ্রামের জামালখান এলাকার রাত সাড়ে ১০টার সময় কাচ্চি ডাইন নামে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে জামায়াত-শিবিরের ৩০ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।

 

কোতোয়ালি থানা পুলিশের ওসি জাহিদুল কবির বলেন, নাশকতার পরিকল্পনা করতে জামালখানের একটি রেস্টুরেন্টে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা বৈঠক করছিল। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে আটক করে। অভিনব কৌশলের অংশ হিসেবে এদিন তারা ‘টি-টোয়েন্টি প্লাস’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে সেখানে বৈঠক করছিলেন।

 

এছাড়া গত ২২ জানুয়ারি নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশ জামায়াতে ইসলামীর ৩১ নেতাকর্মীকে আটক করে। এ সময় তাদের বহন করা একটি মিনিবাসও আটক করে পুলিশ।

 

কোতোয়ালি থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, জামায়াতের নেতাকর্মীরা জেলা শহরে নাশকতামূলক কর্মকান্ড করার পরিকল্পনা করছেন এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ এ অভিযান চালায়। অরাজকতা ও নাশকতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য এসব নেতাকর্মী জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে জেলা শহরে প্রবেশ করে।

 

এছাড়া গত ৫ নভেম্বর রংপুরের হাজিরহাট থানার উত্তম মৌলভিপাড়ার একটি বাড়ি থেকে জামায়াতের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাদের রংপুর মেট্রোপলিটন আদালতে নিলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন।

 

হাজিরহাট থানার ওসি রাজিব বসুনিয়া জানান, গোপন তথ্যে জানতে পারি, হাজিরহাট থানার ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি আব্দুল জলিলের বাড়িতে তিন নেতার বৈঠক চলছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করি।

 

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন ব্যানারে তারা সংঘঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে, করছে গোপন বৈঠকও। তবে আমাদের গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও সজাগ রয়েছে। খবর পাওয়া মাত্রই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। কোনোভাবেই তাদের নাশকতা করতে দেয়া হবেনা বলেও জানান কর্মকর্তারা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য