-->
শিরোনাম

বিআরটিএর দালাল ও মোটরসাইকেল চোর চক্রের ভয়ংকর সিন্ডিকেট

ইমরান খান
বিআরটিএর দালাল ও মোটরসাইকেল চোর চক্রের ভয়ংকর সিন্ডিকেট

ইমরান খান: বিআরটিএর দালালদের যোগসাজশে গড়ে ওঠে মোটরসাইকেল চোর চক্রের ভয়ংকর সিন্ডিকেট। চুরির পর কৌশলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে চুরিকৃত মোটরসাইকেল নিয়ে এই চোর চক্রের সদস্যরা রাজধানী ছেড়ে দেশের কোনো দূরবর্তী জেলায় চলে যেতেন। সেখানে নিজস্ব ওয়ার্কশপে নিয়ে মোটরসাইকেলের রং, ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর ও নম্বর প্লেট পরিবর্তন করে ফেলতেন। এরপর বিআরটিএর দালালদের সহযোগিতায় রেজিস্ট্রেশন নম্বর পরিবর্তন এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চুরি করা ওইসব গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় করত এই চক্র।

 

এই চক্রের মূল হোতা সৈয়দ মাহামুদ হাসান। তার নির্দেশে এই চক্রের সদস্য আল-আমিন তার দৃশ্যমান পেশা রং-মিস্ত্রির কাজের আড়ালে তাদের চোরাইকৃত মোটরসাইকেলগুলো বিক্রির জন্য গ্রাহক সংগ্রহ করতেন। এছাড়াও মিরাজ তার দৃশ্যমান পেশা গাড়ি চালনার আড়ালে এসব চোরাই মোটরসাইকেলগুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরে কাজ করতেন।

 

২০২২ সালের শুরুর দিক থেকে মাহমুদ মোটরসাইকেল চোরচক্রের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। পরে এ ধরনের আরো কয়েকটি সংঘবদ্ধ চোরচক্রের সঙ্গে সম্মিলিত হয়ে একটি বৃহৎ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন তিনি। পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন নম্বর পরিবর্তন এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করতে সম্পর্ক করেন বিআরটির সুজন নামের এক দালালের সঙ্গে। এভাবেই এই বৃহৎ এই সিন্ডিকেটটি রাজধানীসহ সারা দেশে তাদের চুরির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। শুক্রবার যশোরের কোতোয়ালি এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোটরসাইকেল চক্রের মূল হোতা সৈয়দ মাহামুদ হাসানসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তারের পর উঠে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই চোর চক্রের মূলহোতা সৈয়দ মাহামুদ হাসান জানান, কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করতেন তারা। মাঠপর্যায়ে মোটরসাইকেল বা গাড়ি চুরির উদ্দেশে টার্গেট করে মোটরসাইকেল রাখার স্থান বা বাসা চিহ্নিত করা হতো। পরে সময়-সুযোগ বুঝে মোটরসাইকেলের তালা ভাঙা ও কাটার মতো কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে রাতের আঁধারে টার্গেটকৃত বাসায় ঢুকে মোটরসাইকেলটি চুরি করে নিয়ে রাজধানী ছেড়ে দেশের কোন জেলায় চলে যেতেন। সেখানে নিজস্ব ওয়ার্কশপে নিয়ে মোটরসাইকেলের রং, ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর ও নম্বর প্লেট পরিবর্তন করে ফেলতেন। পাশাপাশি ওই মোটরসাইকেলের কিছু পার্টস পরিবর্তন বা সংযোজন করে দেয়া হতো, যাতে প্রকৃত মালিক গাড়িটিকে সহজে চিনতে না পারেন।

 

পরে এই চোর চক্রের আরেকটি দল বিআরটিএতে দালালদের সহযোগিতায় রেজিস্ট্রেশন পরিবর্তন এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে চুরি করা ওইসব গাড়ি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্রয়-বিক্রয় করা হতো। রেজিস্ট্রেশন পরিবর্তন এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরিতে এ চক্রকে সহযোগিতা করতেন সুজন নামের বিআরটির এক দালাল।

 

এ বিষয়ে র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন জানান, গতকাল শুক্রবার যশোরের কোতোয়ালি এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোটরসাইকেল চক্রের মূল হোতা সৈয়দ মাহামুদ হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় ওই চক্রের আরো দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

গ্রেপ্তার অন্য ব্যক্তিরা হলেন- মিরাজ হোসেন (৩২) ও মো. আল আমিন (৪৩)। পরে তাদের কাছে থেকে একটি চোরাই মোটরসাইকেল এবং একটি চোরাই মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়।

 

এই র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চোরাই ও ছিনতাইকৃত মোটরসাইকেল ও গাড়িগুলো একটি বৃহৎ সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে গাড়ির রং, ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর পরিবর্তন এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করত। পরে ওইসব গাড়ি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্রয়-বিক্রয় করত।

 

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন জানান, এভাবেই এই বৃহৎ সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোরচক্রটি পরস্পরের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল ও গাড়ি চুরি করে সেগুলো সাধারণ মানুষের নিকট বিক্রি করেছে।

মন্তব্য

Beta version