-->
শিরোনাম
এটিইউর অভিযানে আটক ২৬

ঋণের নামে অ্যাপের ফাঁদ, সর্বস্বান্ত হাজারো মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঋণের নামে অ্যাপের ফাঁদ, সর্বস্বান্ত হাজারো মানুষ

‘র‌্যাপিড ক্যাশ’ নামে একটি অ্যাপ মোবাইলে ডাউনলোডের পর রেজিস্ট্রেশন করলেই মিলবে লোন। এমন কথার ফাঁদে পড়ে অনেকেই অ্যাপসটি মোবাইলে ডাউনলোড করেন। তবে সেই অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করলেই ভুক্তভোগীদের মোবাইলে থাকা সব তথ্য অটো চলে যেত চক্রটির হাতে। পরে তারা সেই তথ্য বাইরে ছড়িয়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নিত মোটা অঙ্কের টাকা।

 

এছাড়া রেজিস্ট্রেশনের পর লোন নিয়ে তারা পড়তেন বিপদে। দু-একদিন পরই শুরু হতো সুদ আদায়ের তাগিদ। ফোন দিয়ে ঋণের কিস্তি ও চড়া সুদ পরিশোধ করতে বলা হতো। কেউ সেই সুদ দিতে না পারলে তাকে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। এভাবে প্রতারণা করে হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এই প্রতারণার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন দুই চীনা নাগরিক এবং এক বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া।

 

অবশেষে রাজশাহীর এক ভুক্তভোগী মামলা করলে পুলিশ নড়েচড়ে বসে। এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ রোডের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে কল সেন্টারটির পরিচালক মহিউদ্দিন মাহিসহ ২৬ জনকে আটক করে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। এ সময় প্রতারণা কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু কম্পিউটার ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।

 

এটিইউ বলছে, চক্রের মূল হোতা হলেন মাহির নামে এক ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে মূলত এই অ্যাপসে লোন পাইয়ে দেয়ার নামে প্রতারণা হয়ে আসছিল। এর মাস্টারমাইন্ড ছিলেন দুই চীনা নাগরিক।

 

বুধবার দুপুরে রাজধানীর বারিধারায় অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিউ) প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন এটিইউর সাইবার ক্রাইম উইং বিভাগের পুলিশ সুপার (এসপি) ফারহানা ইয়াসমিন।

 

তিনি বলেন, অ্যাপটি মোবাইলে ডাউনলোড করার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীর সব কন্টাক্ট নম্বর, গ্যালারির তথ্য, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিত চক্রটি। তারা ৫০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লোন দিতে। কিন্তু এই টাকার বিপরীতে মোটা অঙ্কের সুদ আদায় করত। তারা উত্তরায় অফিস খুলে ভারত ও পাকিস্তানি নাগরিকদের তাদের দেশের ভাষায় কথা বলে আকৃষ্ট করত।

 

এজন্য তারা অফিসে তরুণ ও তরুণীদের রেখে হিন্দি ও উর্দু ভাষায় ভারত-পাকিস্তানের নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলাত। এর জন্য অফিসে থাকা লোকজনকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন দিত চক্রটি। পাশাপাশি কেউ গ্রাহকের কাছে টাকা আদায় করতে পারলে তাদের বোনাস দেয়া হতো। চক্রটির আরো কল সেন্টার আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

ফারহানা ইয়াসমিন জানান, চক্রটির সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করতেন মহিউদ্দিন মাহি। এই মাহি চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর পড়াশোনা করেছেন। তিনি ভালো চীনা ভাষা বলতে পারেন। এই সুযোগকে প্রতারণায় কাজে লাগান তিনি। বাংলাদেশে বসে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের একইভাবে লোন দিয়ে প্রতারণা করতেন তারা। পরে মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে টাকা আদায় করত চক্রটি।

 

ফারহানা ইয়াসমিন আরো জানান, মূলত অ্যাপটিতে রেজিস্ট্রেশন করলেই সব তথ্য চলে যেত চক্রটির হাতে। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকে এখন সর্বস্বান্ত।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version