-->
শিরোনাম

কনস্টেবল বাদল হত্যা মামলার মূল হোতা গ্রেপ্তার

ইমরান খান
কনস্টেবল বাদল হত্যা মামলার মূল হোতা গ্রেপ্তার

ইমরান খান: রাজধানীর মতিঝিলে এজিবি কলোনি এলাকায় একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটে ২০১২ সালের ৯ নভেম্বর। এ ঘটনায় রিপনের অন্যতম সহযোগী ও তার খালাতো ভাই গোপাল চন্দ্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হয়।

 

এর কিছুদিন পর একটি মাদকবিরোধী অভিযানে রিপন নাথ ও তার একজন সহযোগী মাদকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়, যেখানে কনস্টেবল বাদল অভিযান চালানো টিমের সঙ্গে ছিলেন। ২ মাস কারাভোগ করে জামিনে বের হয় রিপন।

 

পরবর্তী সময়ে তারা জানতে পারে, মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ নেয়া কনস্টেবল বাদল মতিঝিল এলাকায় বসবাস করছেন। বিভিন্ন সময় তাদের গ্রেপ্তারের পেছনে পুলিশ সদস্য বাদলের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করে আসামিরা। পরে নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা পরিচালনার জন্য রিপন তার সহযোগীদের নিয়ে কনস্টেবল বাদলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

 

পরিকল্পনা অনুযায়ী বিশ্বজিৎ কনস্টেবল বাদলকে ডেকে এনে কৌশলে প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকে এবং তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতে থাকে। একপর্যায়ে রাজধানীর মতিঝিল কালভার্ট সংলগ্ন নির্জন এলাকায় রিপন নাথ ও তার অন্য সহযোগীরা গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে কনস্টেবল বাদলকে হত্যা করে মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়।

 

এ ঘটনায় এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি হত্যা মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল রিপনকে প্রধান করে ৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্তকারি কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করেন।

 

বাদল হত্যাকান্ডের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলেও এ মামলার বিচারকাজ চলমান থাকা অবস্থায় জামিনে বের হয়ে টাঙ্গাইলে আত্মগোপনে চলে যায় রিপন। বিচারিক কার্যক্রম শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রিপন নাথ ঘোষসহ মোট ৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন আদালত।

 

১০ আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রিপন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করত। কিছুদিন পর পর বাসা পরিবর্তন করত। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার।

 

বৃহস্পতিবার রাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি রিপন নাথ ঘোষকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১০ এর একটি দল। এ সময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মাদকসহ বিভিন্ন নামে নিবন্ধনকৃত ৯টি মোবাইল সিম। শুক্রবার দুপুরে কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

 

তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অজ্ঞাতপরিচয়ের এক যুবককে শরীরে জখম অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

তিনি বলেন, এরপর জানা যায়, মৃত বাদল মিয়া পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি হত্যা মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল গ্রেপ্তার রিপনকে প্রধান করে ৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করেন। বিচারিক কার্যক্রম শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রিপন নাথ ঘোষসহ মোট ৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন আদালত।

 

তিনি বলেন, কনস্টেবল বাদল এভাবেই দায়িত্ব পালনকালে একটি মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ নেয়ার কারণে মাদক চোরাকারবারি ও সন্ত্রাসীদের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে জীবন দেন। কনস্টেবল বাদলের মতো এমন অনেক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত দেশ বিনির্মাণে কাজ করতে গিয়ে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। সন্ত্রাসীদের হামলায় অনেক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য গুরুতর জখম অথবা অঙ্গ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

 

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, গ্রেপ্তার রিপন মতিঝিল এলাকার চিহ্নিত মাদক চোরা কারবার এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। কনস্টেবল বাদল হত্যাকান্ডের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলেও এ মামলার বিচারকাজ চলমান থাকা অবস্থায় জামিনে বের হয়ে টাঙ্গাইলে আত্মগোপনে চলে যায় রিপন।

 

আত্মগোপনে থেকে মাদক কারবারের জন্য বিভিন্ন নামে নিবন্ধনকৃত মোবাইল সিম ব্যবহার করে। ২০১৩ সালের আগেও কয়েকবার মাদক মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয় এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ভোগ করে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version