-->
শিরোনাম

রাজধানীতে ১৬ মাসে ২২৪ খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীতে ১৬ মাসে ২২৪ খুন

রাজধানী ঢাকায় প্রতি মাসে গড়ে এ ধরনের খুনের ঘটনা ঘটে ১৩ থেকে ১৫টি। অধিকাংশ খুনের কারণ মাদক, ছিনতাই, পারিবারিক নির্যাতন ও। ব্যক্তিগত শত্রুতা।

 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে রাজধানীতে ১৭৩টি খুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৯৭ শতাংশ খুনের ঘটনাই অরাজনৈতিক। ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত রাজধানীতে ৫১টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৫০টি খুনের ঘটনাই অরাজনৈতিক।

 

অর্থাৎ ১৬ মাসে মোট খুন হয়েছে ২২৪টি। নগরজুড়ে ঘটা এসব খুনের প্রায় ৪০ শতাংশই হয় ওয়ারী ও মিরপুর অঞ্চলে। বাকি সব এলাকা মিলে হয় ৬০ শতাংশ।

 

চলতি বছরের ২ এপ্রিল রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে রিকশা ছিনতাই করার জন্য দুই ছিনতাইকারী একটি অটোরিকশা ভাড়া করেন। অটোরিকশাটি ডেমরা থানার আমুলিয়া মডেল টাউনে নির্জন জায়গায় যাওয়ার পর পিছন আসা আরো দুই ছিনতাইকারীসহ চার ছিনতাইকারী মিলে ইট দিয়ে রিকশাচালকের মুখ, চোখ ও মাথায় আঘাত করেন।

 

পরে গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন চালককে। এর মাসখানেক আগেও একই জায়গায় একই পদ্ধতিতে আরেক রিকশাচালককে হত্যা করে রিকশা ছিনতাই করে এ চক্র। এদিকে গত বছরের ২৭ মার্চ মাসে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন গরিবের ডাক্তার খ্যাত মগবাজারে রংপুর ডেন্টাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের দন্ত চিকিৎসক ডা. আহমেদ মাহী বুলবুল। সেখানে দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া বুলবুল খুন হন ছিনতাইকারীর হাতে।

 

একইভাবে চলতি মাসের ১৩ জুন রাতে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় অর্কিড জামশেদ টাওয়ারের বাসা থেকে মাহমুদা হক বৃষ্টি ও মেয়ে সানজা মারওয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ হত্যার দায়ে বৃষ্টির স্বামী সেলিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পারিবারিক কলহ, অশান্তির জেরে পরিকল্পিতভাবে দুধের সঙ্গে ৩০টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে স্ত্রী ও মেয়েকে খাওয়ান সেলিম।

 

এতে দুজনের মৃত্যু হয় বলে ধারণা পুলিশের। গত বছরের ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলী এলাকায় ঢাকার মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে (৫৪) গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় তার গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন টিপুর গাড়িচালক মুন্না। দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় তোলে এ হত্যাকান্ড।

 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে রাজধানীতে ১৭৩টি খুনের মধ্যে শুধু রাজনৈতিক কারণে খুনের ঘটনা তিনটি। ২০২৩ সালে ৫১টি খুনের মধ্যে রাজনৈতিক কারণে খুনের ঘটনা ঘটেছে একটি। রাজনৈতিক এসব হত্যাকান্ডের বেশিরভাগই হয় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে।

 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম বলেন, খুন-হত্যার ঘটনা মাদক, ছিনতাই বা অন্য যেকোনো কারণেই হোক না কেন, গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হয়। আলোচিত বা চাঞ্চল্যকর খুন-হত্যার ক্ষেত্রে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে আমরা অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করি।

 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজধানীসহ দেশের যেখানেই খুন, হত্যাকান্ড ঘটে তার কারণ খুঁজে বের করে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করি। এসব খুন, হত্যার পিছনে মাদক, ছিনতাই, পারিবারিক কলহসহ নানা কারণ থাকে। তবে কারণ যাই হোক, অপরাধীকে দ্রæত আইনের আওতায় আনাই আমাদের লক্ষ্য থাকে।

 

এদিকে এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, নানা কারণে পরিবার ও সমাজে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। পরিবারে বিশ্বাসের জায়গায় যখন কেউ শতভাগ পূরণ করতে না পারে বা প্রত্যাশিত মাত্রা অর্জন করতে না পারে, তখনই পরিবারিক কলহ এবং খুনের মতো ঘটনা ঘটে।

 

এছাড়া মাদক, ছিনতাই, পারিবারিক কলহ, ক্ষমতা প্রদর্শন, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা বিষয় কেন্দ্র করেও খুনের ঘটনা ঘটে।

 

পরিবার ও সমাজে খুন, হত্যাসহ অপরাধ কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবারে সম্পর্কের জায়গায় বিশ্বাসটা অক্ষুণ্ণ রাখার পাশাপাশি যেকোনো ধরনের মাদক থেকে পরিবারের সদস্যটিকে দূরে রাখতে হবে। আর সমাজে যেন কোনো ধরনের অস্থিরতা তৈরি না হয় তার জন্য সরকারকে সব বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে যাতে কেউ অপরাধের দিকে ধাপিত হতে না পারে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version