-->
শিরোনাম

গুলশান-বনানীর অন্ধকার জগৎ

রুদ্র মিজান
গুলশান-বনানীর অন্ধকার জগৎ

রুদ্র মিজান: গুলশান ও বনানী। ঢাকার অভিজাত এলাকা। এখানে দেশি-বিদেশি কূটনৈতিক থেকে শুরু বিত্তশালীদের বসবাস। এ এলাকাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অনৈতিক কর্মকান্ডের বিশাল সিন্ডিকেট। বাসাবাড়ি; এমনকি বাণিজ্যিক ভবন ভাড়া নিয়ে প্রকাশ্যেই চলছে সিন্ডিকেটের নিষিদ্ধ ব্যবসা। অভিজাত এলাকার বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে এ সিন্ডিকেটের অনৈতিক কর্মকান্ড। সম্প্রতি নিষিদ্ধ এ বাণিজ্য বন্ধের দাবিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের (ডিএমপি) কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

 

অবশ্য গুলশান বিভাগের উপকমিশনার শহিদুল্লাহ বলেন, এ নিষিদ্ধ কারবার বন্ধের জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

 

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুলশানে একাধিক সেলুন ও ম্যাসাজ পার্লারের নামে গড়ে উঠেছে স্পা সেন্টার। সেন্টারগুলো একটি নারী চক্র ও মাদক কারবারিরা পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সমাজের বিভিন্ন নামিদামি ও ক্ষমতাশালীদের নাম ভাঙিয়ে এসব পরিচালনা করে আসছে প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা।

 

কেউ রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিয়ে, কেউ বিশেষ একটি জেলার পরিচয়ে, আবার কেউ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিচয় দিয়ে দাপটের সঙ্গে সেলুন ও ম্যাসাজ পার্লারের আড়ালে অনৈতিক কর্মকান্ড সহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছে। কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা অর্থের বিনিময়ে এসব কার্যক্রম করতে তাদের সহযোগিতা করে আসছেন বলেও রয়েছে অভিযোগ।

 

সেলুন ও ম্যাসাজ পার্লার বা স্পা সেন্টারগুলোয় নানা প্রলোভন দেখিয়ে সুন্দরী নারীদের সংগ্রহ করে থাকে দালাল চক্র। আবার কেউ অর্থের প্রয়োজনে এসব অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন।

 

সূত্রমতে, দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় এনে এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে বাধ্য করা হয় নারীদের। অনেক ক্ষেত্রে শুরুতে না বুঝে এসে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হন নারীরা। পরে তাদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করেন প্রতিষ্ঠানের মালিক বা দালাল চক্রের সদস্যরা।

 

গুলশান একটি ডিপ্লোমেটিক জোন এবং এমন একটি জায়গায় এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান ঘিরে সুন্দরী নারীদের নিয়ে মাদকসহ ডিজে পার্টি, সেলুনের আড়ালে দেহ ব্যবসাসহ নানা অপরাধ নিয়মিত হয়ে আসছে। নিষিদ্ধ এসব ব্যবসায় অন্যতম হোতা কুদ্দুস, বাহার, নূর-ইসলাম ও জাফর। সেইসঙ্গে গুলশান ১৩০ নম্বর সড়কের লাবণী আক্তার ইভা, মেঘলা, ১৩১ নম্বর রোডের সুমনা এবং ২৪ নম্বর রোডের জারার সম্পর্কে তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।

 

জানা যায়, বনানীর আউয়াল টাওয়ারে এ ধরনের একটি অবৈধ প্রতিষ্ঠান ছিল। সেই প্রতিষ্ঠান ঘিরে ২০২২ সালে একটি হত্যাকান্ড ঘটে। সেই মামলার প্রধান আসামি নূর-ইসলাম। তিনি দীর্ঘদীন গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। মামলার চার্জশিট থেকে নিজেকে রক্ষা করে আবারো প্রকাশ্যে এসেছেন তিনি। ৪১ নম্বর রোডে অসাধু ব্যবসায়ী কুদ্দুসের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মাসে মানবপাচার আইনে দুটি মামলা হয় গুলশান থানায়। এরপরও থেমে নেই নিষিদ্ধ এ কারবার। এসব বিষয়ে গত ১০ জুলাই ও ৩১ জুলাই অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধের দাবিতে ডিএমপি কমিশনার কাছে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

 

স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াহিয়া সরকার বলেন, এ ধরনের কর্মকান্ডের আমরা বিব্রত। বাসাবাড়িতে প্রকাশ্যেই অনৈতিক কর্মকান্ড চলছ যেন এগুলো দেখা বা প্রতিকারের কেউ নেই। তিনি এসব বন্ধের জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

 

এ বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, সব অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। এসব বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এসব অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধের পাশাপাশি জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।

 

 

মন্তব্য

Beta version