-->
শিরোনাম

নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা

রুদ্র মিজান
নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা

রুদ্র মিজান: সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। চলছে পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচি। রাজধানী ঢাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে রাজনৈতিক দলগুলো বেশ তৎপর। প্রায়ই ঘটছে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা। এক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জসহ রাজধানীর চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হচ্ছে মিছিল-মিটিংয়ে। তাদের জন্য স্থানীয় নেতাদের পক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চিহ্নিত-দাগি এসব সন্ত্রাসীর গতিবিধি নজরদারি করছেন গোয়েন্দারা।

 

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবৈধ অস্ত্র আমদানিও বেড়েছে। প্রায়ই সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অস্ত্র জব্দ করা হচ্ছে। এমনকি টেকনাফের গহিন অরণ্যে অস্ত্র তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে তা বিক্রি করা হয় দেশের বিভিন্ন এলাকার অপরাধী-সন্ত্রাসীদের কাছে। এসব সন্ত্রাসীরর তালিকা হালনাগাদ করছে র‌্যাব। শিগগিরই জোরধার করা হবে অভিযান।

 

গত ৩০ জুলাই রাজধানীর শান্তিনগরে গুলিতে গুরুতর আহত হন শ্রমিক নেতা মানিক (৪৫)। গোলাগুলির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সড়ক পরিবহন ও যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু ও তার গৃহকর্মী রুবেলকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এ ঘটনায় মানিকের স্ত্রী সাজেদা বেগম বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করেন।

 

মামলায় তিনি অভিযোগ করেছেন, বাচ্চু তার বেইলি রোডের নিজ ফ্ল্যাটে হত্যার উদ্দেশ্যে মানিককে গুলি করে আলামত নষ্ট করেছেন। সূত্রমতে, অবৈধ টাকার ভাগ-বাটোয়ারাকে কেন্দ্র কেন্দ্র করে এই গুলির ঘটনা ঘটে। গোয়েন্দারা জানান, অবৈধ অস্ত্র দিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে প্রায়ই। এই ছিনতাইকারীরা এখন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে।

 

ঢাকার নবাবগঞ্জে বিএনপির এক নেতার বাড়িতে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। ২ আগস্ট বুধবার রাত ১০টা ৫৪ মিনিটে উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমানের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। মাসুদুর রহমান জানান, রাজনৈতিক কারণে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণ করেছে।

 

সীমান্ত দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নিজেদের ক্ষমতা জানান দিতে অনেকেই এসব অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করছে। গোয়েন্দা সূত্রমতে, চট্টগ্রাম সীমান্ত দিয়ে তুলনামূলক বেশি অস্ত্র আমদানি হচ্ছে। সীমান্ত ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প হয়ে অস্ত্র যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। সম্প্রতি এক অভিযানে রাজধানীতে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

 

তাদের কাছ থেকে অস্ত্র জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তারা এই অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে কাটআউট পদ্ধতিতে। ফলে অস্ত্রের মূল সরবরাহকারী রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। গোয়েন্দারা জানান, গত দুই মাসে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় ২০টি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

 

বিজিবি জানিয়েছে, গত জুন মাসে আটটি পিস্তল-রিভলবার জব্দ করা হয় সীমান্ত এলাকায়। তার আগে মে মাসেও আটটি পিস্তল-রিভলবার জব্দ করা হয়। কিন্তু গত মার্চ মাসে জব্দ করা হয়েছিল দুটি ও এপ্রিলেও দুটি। গত জুলাই মাসের পরিসংখ্যান তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও অস্ত্র জব্দের পরিসংখ্যান বাড়ছে বলেই জানিয়েছে বিজিবি।

 

অস্ত্র যখন সীমান্ত দিয়ে বেশি আসে, তখনই জব্দের পরিসংখ্যান বাড়ে। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান জানান, তবে অস্ত্র কোথা থেকে আসছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না। অবৈধ অস্ত্রসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঠেকাতে বিজিবি-বিএসএফ যৌথভাবে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাধারণত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্ত্র ও সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে যায়। র‌্যাব এ বিষয়ে সবসময়ই তৎপর। ইতোমধ্যে টেকনাফে আমরা অনেক অস্ত্র জব্দ করেছি। সেখানে অস্ত্র তৈরির চার-পাঁচটি কারখানাও পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে কাজ করছে র‌্যাব। অভিযানের জন্য সন্ত্রাসীদের তালিকাও হালনাগাদ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version